গল্পের ‘ইচ্ছেডানা মেলে’ দেদার ভেসে বেড়াল খুদেরা। গল্প থেকে অনুগল্পের আনাচে-কানাচে চষে বেড়ালেন বড়রা। আর, এ সবের যোগফল গল্পমেলার বার্ষিক অধিবেশনে জমজমাট সাহিত্য চর্চা জারি রইল টানা দু’দিন গঙ্গা পারের প্রাচীন জনপদ চন্দননগরে।
চন্দননগর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের যৌথ উদ্যোগে গত ১০ এবং ১১ ডিসেম্বর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সভাগৃহে (রবীন্দ্র ভবন) দু’দিন ধরে ওই অধিবেশন হয়। প্রারম্ভিক পর্বে শিশু-কিশোর গল্প পাঠের আসর বসে। এই পর্বে ছোটরা গল্পপাঠ করে। এর পরে ছিল বড়দের গল্পপাঠ। সংগঠকেরা জানিয়েছেন, প্রতি ক্ষেত্রেই পাঠের পাশাপাশি আলোচনা করা হয়। ছিল বিতর্ক সভা। বিতর্কের বিষয় ছিল ‘এখন সাহিত্য রচনায় কোনও অনুশীলনের দরকার হয় না’। দ্বিতীয় দিন অনুগল্প পাঠ এবং আলোচনা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ‘সাম্প্রতিক একটি গল্প পাঠের অনুভূতি’ও অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু হিসেবে তুলে ধরা হয়। এ বারের অধিবেশনে লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। প্রথম দিন লেখকের গল্প পাঠ করেন সৌম্যদেব বসু, অমিত সেনগুপ্ত । দ্বিতীয় দিন একটি পর্বে আলোচনার বিষয় ছিলেন ‘প্রেমেন্দ্র মিত্র’। আলোচক ছিলেন রবীন পাল-সহ অনেকে। স্মৃতিচারণ করেন লেখক-পুত্র মৃন্ময় মিত্র। |
গল্প লেখার জন্য এ বারের গল্পমেলা পুরস্কার পান গৌর কারক। গল্প নিয়ে গবেষণামূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনাদি স্মারক সম্মান দেওয়া হয় অব্যয় লিটারেরি সোসাইটিকে। সম্মাননা জ্ঞাপনের পরে আলোচনার আসর বসে ‘গল্পের জন্মমূহূর্ত’ নিয়ে। এর পরে গল্পপাঠ এবং সেই সংক্রান্ত আলোচনা দিয়েই যবনিকা পড়ে এ বারের অধিবেশনের। এই দু’দিন গল্পপাঠ ও আলোচনা করেন সাহিত্যিক অমর মিত্র, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, রীতা বসু, সর্বানী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরিন্দম বসু প্রমুখ। গল্প ও অনুগল্প নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্বজিৎ পান্ডা-সহ বাংলা সাহিত্য জগতের বহু পরিচিত মুখ। সাহিত্যপ্রেমী বহু মানুষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সাহিত্যপ্রেমী প্রবাসী বাঙালিদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। সব দেখে গল্পমেলার যুগ্ম সম্পাদক গৌর বৈরাগী বলেই ফেললেন, “টিভির রমরমার যুগেও বাঙালির সাহিত্যপ্রেম যে একই রকম অমলিন, আমাদের দু’দিনের অধিবেশন আরও এক বার তা প্রমাণ করে গেল।” |