|
|
|
|
পারিশ্রমিক না বাড়ালে কাজ বন্ধ, হুঁশিয়ারি ডোমেদের |
দেবাশিস দাশ • কলকাতা |
ফাঁসুড়ে নাটা মল্লিক এক সময়ে ফাঁসির পারিশ্রমিক বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন। এ বার প্রায় একই ধরনের দাবি তুললেন হাওড়ার বিভিন্ন থানার ডোমেরা। তাঁদের দাবি, পারিশ্রমিক না বাড়ালে তাঁরাও এ বার মৃতদেহ তোলা ছেড়ে দেবেন।
ফাঁসি হয় কালেভদ্রে। কিন্তু প্রতিটি থানা এলাকায় মৃতদেহ উদ্ধার প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। ডোমেরা দেহ না তুললে তা তুলবেন কারা? এই দাবি নিয়ে তাই স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত হাওড়ার পুলিশ কমিশনারেট।
হাওড়া শহরে বিভিন্ন থানায় মৃতদেহ বহনের জন্য রয়েছে একটি করে তিন চাকার শববাহী ট্রলিভ্যান ও এক জন চালক। বংশানুক্রমে যাঁরা এই কাজ করে থাকেন, সরকারি ভাবে তাঁদেরই পরিচয় ‘ডোম’। এই পরিচয়েই জেলাশাসকের নাজিরখানা থেকে পারিশ্রমিক পান তাঁরা। এই ডোমেদের অভিযোগ, ২০০০ সালে ট্রলিভ্যানে করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য কিলোমিটার প্রতি তাঁদের দেওয়া হত ১২ টাকা। গত ১১ বছরেও বাড়েনি সেই অঙ্ক। উপরন্তু, গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত টাকাও পাচ্ছেন না তাঁরা। এই অবস্থায় সংসার প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। তাই অবিলম্বে পারিশ্রমিক না বাড়ালে তাঁরা আর দেহ তুলতে যাবেন না বলেই ওই ডোমেদের হুমকি।
লিলুয়া থানার ডোম সঞ্জয় মল্লিকের প্রশ্ন, “একটি মৃতদেহ তুলে আমাদের সর্বাধিক আয় হয় মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। অথচ রেল মৃতদেহ পিছু ডোমেদের এক হাজার টাকা করে দেয়। আমাদের প্রশ্ন, রেল প্রশাসন যদি এই টাকা দিতে পারে, জেলা প্রশাসন কেন পারবে না?”
থানার জন্য মৃতদেহবাহী ওই ভ্যানচালকদের অভিযোগ, প্রাপ্য ওই সামান্য টাকা পেতেও তাঁদের দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয়। কারণ, একটি বিল তৈরি করে পুলিশ অফিস থেকে ‘পাশ’ করাতেই কেটে যায় বহু মাস। মূলত এই কারণেই তাঁদের টাকা পেতে দেরি হয়। এর পরে বিল জেলাশাসকের দফতরে যায়। সেখানে অনুমোদন পেয়ে সেটি যায় নাজিরখানায়। সেখান থেকে টাকা দেওয়া হয়। বছরে এই ভাবে এক বার বা দু’বার টাকা মেলে।
তবে তাঁদের সংসার চলে কী ভাবে? বালি থানার ডোম টার্জান মল্লিক বলেন, “মৃতের আত্মীয়েরা আমাদের হাতে দয়া করে কিছু টাকা দেন বলে আমাদের কোনও ভাবে চলে যায়। কিন্তু এই ধরনের কাজ করার পরেও অন্য লোকের কাছে আমাদের হাত পাততে হবে কেন?”
প্রাপ্য টাকা পেতে দেরি হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ অধিকাংশ থানার মৃতদেহ বহনকারীরা। ঠিক সময়ে বিলের টাকা না পাওয়ায় চরম সমস্যায় দিন কাটাতে হয় পুলিশ-প্রশাসনের অপরিহার্য এই কর্মীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্যানচালকের অভিযোগ, “এই কাজ আমরা বংশানুক্রমে করছি। আগে আমাদের আশা দেওয়া হয়েছিল যে, সব থানায় সরকারি ভাবে এক জন করে ডোম নেওয়া হবে। সেই আশাতেই ছিলাম। কিন্তু এত দিনেও চাকরি হল না। উপরন্তু টাকাও বাড়ানো হল না। তাই আমরা ঠিক করেছি, লাশ তোলার কাজ বন্ধ করে দেব।”
হাওড়ার ডিসি (সদর) সুকেশকুমার জৈন বলেন, “পুলিশ অফিস থেকে বিল যায় জেলাশাসকের দফতরে। সেখান থেকেই টাকা দেওয়া হয়। হয়তো সেখানেই দেরি হয়। আমাদের অফিস থেকে বিল দ্রুতই ছাড়া হয়।”
হাওড়ার জেলাশাসক সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বলেন, “এ বিষয়ে সবিস্তার খোঁজ নেব। পারিশ্রমিক কেন এত বছরে বাড়েনি, খতিয়ে দেখা হবে।” |
|
|
|
|
|