বার-এ বসেছে মদ্যপানের আসর। ‘ওয়েটার’ মক্কেলদের ফরমাস অনুযায়ী জোগান দিয়ে চলেছেন পেগের পর পেগ পছন্দসই নামী ব্র্যান্ডের মদ। কিন্তু মক্কেলরা জানতেই পারছেন না তাঁরা আসলে মদের বদলে রঙিন পানীয় খাচ্ছেন।
হাওড়ায় জেলা জুড়ে মুম্বই রোডের ধারে বার এবং মদের দোকানগুলির অধিকাংশে অবাধে জাল মদ বিক্রি হচ্ছে। অভিযোগ, পুলিশ এবং আবগারি দফতরের লোকজন দেখেও বিষয়টি দেখেন না। জাল মদের এই অবাধ বিক্রি এক দিকে যেমন শারীরিক ক্ষতির কারণ। অন্য দিকে, মদ্যপায়ীরা প্রতারিতও হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এর ফলে আসল মদ বিক্রি কমছে। সংস্থাগুলির প্রত্যাশিত লাভ হচ্ছে না। সরকারেরও বিপুল টাকা রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে।
মুম্বই রোডে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। জেলা জুড়ে রাস্তার দু’দিকে পাল্লা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কারখানা, লজিস্টিক হাব। বাড়ছে জনসমাগম। তৈরি হচ্ছে হোটেল, ধাবা এবং বার। গড়ে উঠেছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান।
হোটেল, ধাবা এবং বারগুলিতে যাঁরা মদ্যপান করতে আসেন তাঁরাই শিকার হন জাল মদের। জাল মদ পরিবেশন করার যে নিয়ম রয়েছে তা হল, প্রথমে দু’তিন পেগ আসল মদ দেওয়া হয়। তার পরে অতিরিক্ত পেগ চাইলেই ফাঁকে ফাঁকে ধরিয়ে দেওয়া হয় জাল মদ। আসল মদ পান করে তখন খরিদ্দারের নেশা হয়ে গিয়েছে। ফলে পরবর্তী পেগগুলি আসল না নকল তা তিনি ধরতে পারেন না। |
কারা চালান এই জাল মদের ব্যবসা? দু’এক জন বার-এর মালিকই জাল মদ তৈরির ব্যবসা চালিয়ে থাকেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তাঁরাই জেলা জুড়ে বার এবং দোকানে জাল মদের জোগান দেন। অ্যালকোহল, রঙ এবং নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের গন্ধ মিশিয়ে জাল মদ তৈরি করা হয়। হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকান থেকেও সংগ্রহ করা হয় অ্যালকোহল। জাল মদ তৈরির সময়ে নামী সংস্থার মোড়ক, বোতলের মাপ সব কিছু নিখুঁত ভাবে অনুকরণ করা হয়। এমনকী বোতল ‘সিল’ও করে দেওয়া হয় নিখুঁত ভাবে।
গত ৪ জুলাই উলুবেড়িয়ার বাণীতবলার কাছে একটি বিশাল জাল মদ তৈরির কারখানায় হানা দেয় পুলিশ ও আবগারি দফতর। কাউকে ধরতে না-পারলেও তদন্ত করে আবগারি দফতর জানতে পেরেছিল এই জাল মদ বিক্রি হত রাস্তার ধারের ধাবা এবং বারগুলিতে। এ ছাড়া ভূয়ো চালানের সাহায্যে ভিনরাজ্যেও চলে যেত এই জাল মদ।
ভুক্তোভোগীরা জানান, নিয়মিত যাঁরা বার-এ মদ্যপান করেন তাঁরা বিষয়টি ধরে ফেললেও কিছুই করার থাকে না। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রতিবাদ করলে তা ধোঁপে টেকে না।” সামাজিক কারণেও অনেকে থানায় অভিযোগও করেননা। ফলে রমরমিয়ে অবাধে চলে জাল মদের ব্যবসা।
বার-এ জাল মদ বিক্রির কথা অবশ্য অস্বীকারই করেছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কাছে জাল মদ নিয়ে কোনও অভিযোগও যেমন আসেনি। এই রকম কারবার চলে বলেও আমাদের কাছে খবর নেই।” এ বিষয়ে আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, “গুরুতর অপরাধ। বার-এ জাল মদ বিক্রির খবর আমাদের কানে আসছে। আমরা মাঝে মাঝে অভিযান চালাই। জেলায় জাল মদের কারখানা পাওয়া গেলেও বার থেকে এখনও জাল মদ মেলেনি।” উলুবেড়িয়ায় আটক করা জাল মদ। |