স্রেফ পুরসভার ট্রেড-লাইসেন্সটুকু সম্বল করে আরামবাগে রমরমিয়ে চলছে লজ-ব্যবসা। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে কার্যত কিছুই নেই। আমরি-কাণ্ডের পরে অগ্নিবিধি মানার তোড়জোড় শুরু হতেই আরামবাগ শহরের বেশিরভাগ লজ মালিকই এখন দিশেহারা। তাঁদের দাবি, অগ্নিবিধি-সংক্রান্ত নিয়মকানুন তাঁরাও চালু করতে চান। কিন্তু কেউ তাঁদের কিছু জানাচ্ছে না।
আরামবাগ শহরে মোট লজ প্রায় ২২টি। এর মধ্যে প্রায় ১০টি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হয়। হাতে গোনা ৩টির ‘সরাই-লাইসেন্স’ থাকলেও তার পুনর্নবীকরণ হয়নি বহু দিন। যেগুলিতে রান্নার ব্যবস্থা আছে, সেগুলি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। পর্ষদের নজরদারি নেই বললেই চলে। একই অবস্থা আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও। অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার ‘রিফিল’ করা হয় না সময় মতো। সিলিন্ডারের সংখ্যাও যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ। |
লিঙ্ক রোডের বসন্তপুর মোড়ের একটি লজের মালিক সজল কুণ্ডু বলেন, ‘‘নিয়মকানুন নিয়ে বিশেষ ধ্যান-ধারণা নেই আমাদের। চারটি সিলিন্ডার রাখা আছে, আরও বাড়াতে হবে জানি। কিন্তু ঠিক ক’টা দরকার তা নিয়ে দমকল দফতরের কোনও পরামর্শ পাইনি।’’ শহরের ব্যস্ততম এই লজটির অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার ‘রিফিলিং’ এখনও হয়নি। লজগুলির উপর তলায় জলের লাইন থাকলেও দমকলের ব্যবহারের জন্য বিশেষ পাইপ লাইন নেই। তিন-চারটি লজে বালির বালতি রাখা হলেও তাতে বালির পরিবর্তে আবর্জনা ভরা। বেশিরভাগ লজেরই ঢোকা-বেরোনোর পথ একটা। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডের কাছে দুটি লজের সামনে বিভিন্ন রুটের বাস দাঁড়িয়ে থাকায় সেখানে দমকলের গাড়ি ঢোকানো কার্যত অসম্ভব। মালিকদের অভিযোগ, ‘‘আমরা বিধি মানতে চাইছি। কিন্তু দমকল দফতর গা করেনি।”
আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডের কাছে হকার্স কর্নার তৈরি হওয়ার পর থেকেই সেখানকার ৫টি লজ সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে স্বীকার করেছে লজ মালিকদের সংগঠন। সংগঠনের সম্পাদক জাফর আলি জানান, “২০০৫ সালে শেষবার লাইসেন্স চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানাই। কিন্তু কোনও লাইসেন্সও নেই, তদন্তও নেই। একটা লজকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। অগত্যা ব্যবসা চালু রাখতে পুরসভার ট্রেড-লাইসেন্সই আমাদের সম্বল। আমাদের দাবি ব্যবসায় যেন কোন কোপ না পড়ে। বিধি নিয়ে সচেতন করা হোক, প্রচার করা হোক।” অন্য দুই লজ মালিক শেখ ভুট্টো এবং শেখ জাহাঙ্গির আলিরাও বলছেন, “আমরা দমকল দফতরে বারবার আবেদন করছি, পরিস্থিতি এসে দেখুন, পথ দেখান আমাদের। কিন্তু কোথায় কী!” বাসুদেবপুরের এক লজ মালিক অসিতবরণ সরকারের কথায়, “নিরাপত্তার বিষয়গুলি নিয়মিত তদারকি না হওয়াতেই নিয়ম মানার প্রবণতা কমছে। আমরা চাই নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা হোক।”
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, ‘‘হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলির সমীক্ষা শেষ করে অন্য ক্ষেত্রেও দেখা হবে। সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও ডাকা হয়েছে।” আরামবাগের দমকলের স্টেশন অফিসার সুনীলবরণ চক্রবর্তী বলেন, “এত দিন বিষয়টি কলকাতার মূল অফিস থেকে দেখা হত। এখন মহকুমাশাসকের নির্দেশ মতো আমরাই বিষয়টি দেখব। নার্সিংহোমের ক্ষেত্রে কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে লজের ক্ষেত্রেও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখব আমরা।”
লজে বিপজজ্জনক ভাবে টানা হয়েছে বিদ্যুতের তার। |