|
|
|
|
সিঙ্গুরে যুক্তি কল্যাণদের |
খুচরোয় বিদেশি লগ্নির মোকাবিলায় ‘কিষান ভিশন’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সিঙ্গুর |
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের মোকাবিলায় এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কিষান ভিশন’ প্রকল্পের ‘মডেল’ ব্যবহার করার কথা বলল তৃণমূল।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতাই এই প্রকল্পটির পরিকল্পনা করেছিলেন। জমি-আন্দোলনের ‘প্রতীক’ হিসাবে সিঙ্গুরকেই প্রথম বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সেখানকার জমিহারা কৃষকদের বিকল্প জীবিকার সংস্থান করার জন্য প্রকল্পটি কাজে লাগানোর কথা বলেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী। সিঙ্গুর স্টেশনের পাশে রবিবার ওই প্রকল্পের আওতাতেই ‘পেরিশেবল কার্গো’ (সব্জি সংরক্ষণ কেন্দ্র)-র উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়।
সেই অনুষ্ঠানেই শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “যাঁরা খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে সওয়াল করছেন, তাঁরা সিঙ্গুরে কিষান ভিশন প্রকল্প দেখে যান! এখানে কাঁচা সব্জি-সহ আলু রাখা যাবে ৮ মাস পর্যন্ত। সারা দেশ জুড়ে যদি এই প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তা হলেই দেশের চাষিরা বাঁচবেন। বিদেশি বিনিয়োগের দরকার হবে না!”
মমতার মতো শরিক দলের আপত্তি ও বিরোধীদের সার্বিক প্রতিবাদে খুচরোয় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রেখেছে কেন্দ্র। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ আবার তা চাঙ্গা করার চেষ্টা করলে তার বিরোধিতায় মমতার নিজস্ব ‘মডেল’ই যে তৃণমূলের হাতিয়ার হতে পারে, সিঙ্গুরে কল্যাণবাবুর বক্তব্যেই তার ইঙ্গিত আছে।
সিঙ্গুরের চার তলা বিশিষ্ট ওই কেন্দ্রটিতে ২২টি চেম্বার করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮টিতে আলু এবং বাকিগুলিতে অন্যান্য সব্জি রাখা হবে। মুকুলবাবু জানিয়েছেন, অন্যান্য হিমঘরের থেকে স্বল্প খরচে এখানে ফসল রাখতে পারবেন চাষিরা। এতে চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলেও মুকুলবাবুর বক্তব্য। সিঙ্গুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে টাটাদের প্রকল্প এলাকার ৪০০ একর জমি ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের ফেরতের ব্যাপারে ফের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাপসী মালিক ও রাজকুমার ভুলের (তৃণমূল যাঁদের সিঙ্গুর আন্দোলনের ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়েছে) ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ দিন সিঙ্গুরের বাজেমিলিয়ায় সভা করে তৃণমূল। দু’জনের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু এবং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপ্যাধায়।
পার্থবাবু বলেন, “জঙ্গলমহল, পাহাড়ের সমস্যা সমাধান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরের বিষয়টি এখন বিচারাধীন। বিচারব্যবস্থার উপরে আমরা পূর্ণ আস্থা রাখছি। প্রকল্প এলাকায় অনিচ্ছুক চাষিদের ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবেই। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। বাকি ৬০০ একর জমিতে শিল্প গড়ার চেষ্টা হচ্ছে।”
মুকুলবাবুও একই ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছেন। যদিও বেলা ৫টার পরে যখন পার্থবাবু-মুকুলবাবুরা বক্তৃতা করছেন, তখন মাঠে মেরেকেটে হাজার দেড়েক লোক। যাঁদের বড় অংশই তৃণমূলের নেতা-কর্মী। স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, লোক আগে ভালই হয়েছিল। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল বেলা ২টো নাগাদ। শীতের সন্ধ্যা দ্রুত নেমে আসায় অনেকেই সভা শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছেড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীরও এই অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল। মাতৃবিয়োগের জন্য তিনি আসতে পারেননি বলে জানিয়েছেন মুকুলবাবু। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরকে কখনও ভোলেন না। সে জন্যই আজ নিজে আসতে না-পারলেও আমাদের পাঠিয়েছেন।” মুখ্যমন্ত্রী না-আসায় ভিড় কিছুটা কম হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। অনুষ্ঠানে তাপসী ও রাজকুমারের বাড়ির লোকজন এসেছিলেন। ছিলেন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, রচপাল সিংহ-সহ জেলার তৃণমূল সাংসদ-বিধায়কেরা। |
|
|
|
|
|