টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল হতে চলেছে ডিমা হাসাও জেলা। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিমাসা জঙ্গি সংগঠন ডিএইচডি-র উভয় গোষ্ঠীও এতে রাজি। মতবিরোধ যে টুকু, তা শুধু কাউন্সিলের এলাকা ও নামকরণ নিয়ে। তা মিটে গেলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে চুক্তি স্বারক্ষিত হবে। পরে বিধানসভার অনুমোদন আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে কাউন্সিলের কাজকর্ম।
ডিএইচডি-র জুয়েল গোষ্ঠী আগেই অবশ্য টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। কাল দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয় দিলীপ নুনিসা গোষ্ঠীর সঙ্গে। জঙ্গি নেতারা শুরুতে পৃথক রাজ্যের দাবি তোলেন। কেন্দ্র এক কথায় তা খারিজ করে দিয়ে টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল গঠন নিয়ে জুয়েল গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত করায়। দিলীপ গোষ্ঠী পরে রাজ্য গঠনের দাবি থেকে সরে এলেও কাউন্সিল নিয়ে নানা শর্ত আরোপ করেন। ডিমা হাসাও ছাড়াও কাছাড় এবং নগাঁও জেলার ৯৪টি গ্রামকেও প্রস্তাবিত কাউন্সিলের আওতাভুক্ত করার দাবি জানান তাঁরা। সেই সঙ্গে এর নাম ডিমারাজি টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল করারও আর্জি জানানো হয়েছে। প্রস্তাবিত এলাকায় একটি লোকসভা আসন, ৪-৫টি বিধানসভা আসন এবং তিনটি জেলা গঠনেরও দাবি তাদের।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (উত্তর-পূর্ব) শম্ভু সিংহ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, জুয়েল গোষ্ঠী কোনও শর্ত ছাড়াই টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। দিলীপরা বোঝাপড়ায় না-এলে তাদের বাদ দিয়েই শুধু জুয়েল গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করা হবে। পাশাপাশি দিলীপগোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ বিরতির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই তাদের শান্তি চুক্তিতে আসতে হবে। নইলে জঙ্গি গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেবে সরকার।
দিলীপবাবু অবশ্য বলেন, টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল নিয়ে জুয়েল গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের বিরোধ নেই। দুই গোষ্ঠীই কাউন্সিলে মিলেমিশে থাকতে পারে। যেহেতু উভয়েরই মূল লক্ষ্য ডিমাসা সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা। তবে শেষ ডিমাসা রাজা গোবিন্দচন্দ্রের পুরো সাম্রাজ্য বাদ দিয়ে শুধু ডিমাসা হাসাও এলাকা নিয়ে কাউন্সিলের চুক্তিতে সই করলে তা সমাজের সঙ্গে শত্রুতা করা হবে বলে তিনি জুয়েল গোষ্ঠীকে সতর্ক করে দেন।
আলোচনায় কেন্দ্রের পক্ষে শম্ভু সিংহ এবং রাজ্য সরকারের পক্ষে স্বরাষ্ট্র সচিব যিষ্ণু বরুয়া ও রাজ্য পুলিশের এডিজি খগেন শর্মা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন অসমের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী পি কে হালদারও। বৈঠক শেষে শম্ভুবাবু বলেন, অন্য জেলা থেকে কেটে এনে টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলে যোগ করা যে সহজ কাজ নয়, তা ডিএইচডি-কে বলে দেওয়া হয়েছে। তবু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক প্রতিনিধি দলকে কাছাড় ও নগাঁও জেলার গ্রামগুলি পরিদর্শন করতে পাঠানো হবে। তাঁরা ওই সব এলাকায় বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন।
ডিমাসা জঙ্গি গোষ্ঠী ডি এইচ ডি (দিলীপ) আট বছর আগে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করে। তাদের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই জন্ম নেয় ডি এইচ ডি (জুয়েল)। এরাও ২০০৯-র ২ অক্টোবর অস্ত্রসমর্পণ করে। পরে আরও ক’টি ডিমাসা জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করলেও কেউ বেশি দিন টিঁকে থাকতে পারেনি। সরকারের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ দেখিয়ে সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
জঙ্গি গুলিতে হত। গুয়াহাটির সংবাদদাতা জানান, কাল বিকালে তিন এনএসসিএন (আই-এম) জঙ্গির গুলিতে কোহিমার আঙ্গামি এলাকায় খুন হলেন স্কুল শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তার গাড়ির চালক এল খেল। এলাকার বাসিন্দারা তিন জঙ্গিকে ধাওয়া করে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। |