লোকপাল বিল পাশ করাতে তাঁরা দিন-রাত এক করে কাজ করছেন বলে বিদেশ সফর সেরে ফেরার পথে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছিলেন, সোমবার বিলটি সংসদে পেশ করার লক্ষ্যে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাতে অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ লোকপাল বিলের চূড়ান্ত খসড়া পেশ করতে পারল না সরকার। শেষ পর্যন্ত সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামিকাল মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডেকে লোকপাল বিলে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরশু সংসদে বিলটি পেশ করা হবে।
এক দিকে চলতি অধিবেশনেই লোকপাল বিল পাশ করানোর ‘অঙ্গীকার’, অন্য দিকে অণ্ণা হজারের ক্রমাগত আন্দোলনের হুমকি স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের চাপটা দু’দিক থেকে। লোকপাল বিল পেশের দিন সংসদের ‘অতিথি গ্যালারি’তে স্বয়ং অণ্ণা উপস্থিত থাকবেন বলে তাঁর কোর কমিটির তরফে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে দিন সংসদ চত্বরে থাকবেন টিম অণ্ণার অন্য সদস্যরাও। এই পরিস্থিতিতে লোকপাল বিলের খসড়া চূড়ান্ত করতে আজ বৈঠকে বসেন সরকারের শীর্ষ নেতারা। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ, টেলিকমমন্ত্রী কপিল সিব্বল, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বিকেলে বৈঠক করেন। রাতে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে বিলের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, সলমন খুরশিদ এবং অন্যান্য মন্ত্রী-আমলাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও যে ‘জট’ পুরোপুরি কাটেনি, তা স্পষ্ট।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকপাল বিলের রূপ চূড়ান্ত করার আগে কয়েকটি বিষয়ে জটিলতা কাটানো এখনও বাকি। যেমন, সিবিআই। সিবিআইয়ের প্রধান নিয়োগের জন্য সরকার একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিতে চায়। তিন সদস্যের ওই কমিটিতে লোকপালও থাকবে। কিন্তু অণ্ণাদের দাবি মেনে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন বা তদন্তকারী শাখাকে লোকপালের আওতায় ছেড়ে দিতে সরকার প্রস্তুত নয়। তবে সরকার স্থির করেছে, দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও মামলা সিবিআইয়ের কাছে তদন্তের জন্য পাঠাতে এবং ওই তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখতে পারবে লোকপাল। সরকারের এক শীর্ষ নেতার কথায়, মূল বিষয়গুলি ছাড়াও লোকপালের বাজেট কী ভাবে তৈরি হবে, লোকপাল কী ভাবেই বা সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে সেই সব বিষয়ও নির্ধারণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া স্থির হয়েছে, লোকপালের উপরে তথ্যের অধিকার আইন বলবৎ থাকবে। নিয়োগের আগে লোকপাল সদস্যদের ভিজিল্যান্স ছাড়পত্রও থাকতে হবে।
কয়েকটি বিষয় অবশ্য মোটামুটি স্থির হয়ে গিয়েছে। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় রাখা হলেও তা যথাসম্ভব রক্ষাকবচ-সহকারেই থাকবে। বিদেশ, নিরাপত্তা, পরমাণু অস্ত্র, মহাকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর রক্ষাকবচ তো থাকবেই। সেই সঙ্গে এ-ও স্পষ্ট করে বলা হবে, কোনও অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে হলে লোকপালের ৯ সদস্যের মধ্যে অন্তত সাত জনকে সহমত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ‘গ্রুপ সি’ কর্মচারীরা সরাসরি লোকপালের আওতায় থাকবেন না। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন তাঁদের ওপর নজর রেখে কিছু সময় অন্তর লোকপালকে রিপোর্ট দেবে। এবং তৃতীয়ত, লোকপালের ৯ জন সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত সংরক্ষণ নীতি (তফসিলি জাতি, উপজাতি, সংখ্যালঘু) মেনে চলা হবে। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকবে।
সরকারের তৎপরতা যখন তুঙ্গে, তখন অণ্ণার চাপও অব্যাহত। আজ চেন্নাইয়ে সভা করেন তিনি। বলেন, “চলতি অধিবেশনে লোকপাল বিল পাশ না হলে ১ জানুয়ারি থেকে জেল ভরো আন্দোলন চলবে। দেশের কোনও জেল যাতে না ফাঁকা থাকে তা সুনিশ্চিত করা হবে। তবে লোকপাল বিল পাশ হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ফুল দেব।” আজই অবশ্য চেন্নাই বিমানবন্দরে অণ্ণাকে কালো পতাকা দেখিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন একটি সংগঠনের পাঁচ সদস্য।
অণ্ণাদের আন্দোলন রাজনৈতিক সুবিধা করে দিলেও এখনও প্রকাশ্যে তাঁদের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছে না বিজেপি। বরং অরুণ জেটলির মত, প্রধানমন্ত্রীর পদ লোকপালের আওতায় থাকলেও যথেষ্ট রক্ষাকবচ থাকা উচিত। আর আডবাণী আজ বলেছেন, একটি কঠোর লোকপাল আইন প্রণয়ন করা যে জরুরি, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। তবে লোকপাল আইন সংসদই চূড়ান্ত করবে। |