বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না চিদম্বরমের। তার জেরে এ বার দলেই কঠোর সমালোচনার মুখে পড়লেন তিনি। তাঁর দুই সতীর্থ, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভায়লার রবি এবং জি কে ভাসান প্রকাশ্যেই তাঁকে বিঁধে বলেন, চিদম্বরম ‘রাজনৈতিক মুর্খামির’ পরিচয় দিয়েছেন। এই চাপের ফলে শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে নিজের মন্তব্য ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
টুজি নিয়ে জেরবার চিদম্বরম এ বার ফাঁসলেন কেরলের মুল্লাপেরিয়া বাঁধ নিয়ে ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে।
মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কেরল এবং তামিলনাড়ুর মধ্যে বিবাদ চলছে। এবং তা এতটাই চরমে যে, দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একে অপরের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। এমনকী, প্রধানমন্ত্রীরও দ্বারস্থ হয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে গত কাল চেন্নাইয়ে কংগ্রেসের এক অনুষ্ঠানে চিদম্বরম
বলেন, “মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ নিয়ে যতটা হইচই হচ্ছে, ততটা বড় বিষয় নয়। কেরলে উপনির্বাচনের জন্য বিষয়টি নিয়ে সেখানে বেশি আলোচনা হচ্ছে। উপনির্বাচন হয়ে গেলে সব বিতর্ক থেমে যাবে।” সেই সঙ্গে চিদম্বরম এ-ও বলেন, “এ ব্যাপারে আদালতও তামিলনাড়ুর পক্ষে রায় দেবে বলে আমি আশাবাদী।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই কেরলের কংগ্রেস নেতাদের চাপে ফেলে দেয়। কারণ, সেখানে মুল্লাপেরিয়ারে নতুন বাঁধ নির্মাণের দাবিতে যুযুধান বামেরাও সরব। তাই কাল বিলম্ব না করেই চিদম্বরমের সমালোচনায় অবতীর্ণ হন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চান্ডি। তিনি জানিয়ে দেন, “এ ব্যাপারে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।”
অন্য দিকে, দিল্লিতে আজ সাংবাদিক বৈঠক করে চিদম্বরমের কার্যত মুন্ডুপাত করেন কেরলের আর এক কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভায়লার রবি। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি জানিয়ে দেন, “চিদম্বরমের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনকই শুধু নয়। এ ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক অপরিপক্কতার লক্ষণ।” একই ভাবে চিদম্বরমের সমালোচনা করেন তামিলনাড়ুর কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী জি কে ভাসানও। ঘরোয়া মহলে তাঁরা বলেন, মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ বিতর্ক সম্পূর্ণ স্থানীয় বিষয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রী যদি কোনও রাজ্যের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন, তাতে সামগ্রিক ভাবে প্রমাণিত হয় যে, কেন্দ্রে কোনও একটি রাজ্যের সঙ্গে পক্ষপাত করছে। সুতরাং চিদম্বরম যা করেছেন তা রাজনৈতিক মুর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি তামিলনাড়ুর কংগ্রেস সাংসদ হতে পারেন। কিন্তু তার থেকে তাঁর বড় পরিচয়, তিনি কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, কেরল কংগ্রেস নেতারা বিষয়টি আজ সনিয়া গাঁধীর নজরে আনেন। আর তার পরেই চিদম্বরম তাঁর গত কালের মন্তব্য ফিরিয়ে নেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ প্রসঙ্গে গত কাল মন্তব্য করা জরুরি ছিল না। আমি নিজের মন্তব্য ফিরিয়ে নিচ্ছি। সেই সঙ্গে এ-ও আশা করছি, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এই বিরোধের মীমাংসা হবে।”
টুজি বিতর্কে এমনিতেই দলের বাইরে কোণঠাসা চিদম্বরম। বিজেপি সংসদে তাঁর বিরুদ্ধে বয়কট চালিয়ে যাচ্ছে। এ বার মুল্লাপেরিয়ার নিয়ে দলের মধ্যেও সমস্যায় পড়লেন তিনি। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, দলে এমনিতেই চিদম্বরমের জনপ্রিয়তা নেই। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তাই সরকারের স্বার্থে টুজি বিতর্কে এখনও কংগ্রেস তাঁর ঢাল হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এটাও লক্ষণীয় যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এখন চিদম্বরম সম্পর্কে কিছুটা সংযত হয়ে মন্তব্য করছেন। ঢালাও শংসাপত্র না দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলছেন। ফলে চিদম্বরমেরও উচিত সংযত হয়ে থাকা। এ ভাবে কংগ্রেসের মধ্যে থেকে যদি প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা শুরু হয়, তা হলে আখেরে চিদম্বরমের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। |