উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। তার ঠিক আগে মূল্যবৃদ্ধি, একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে বিপর্যস্ত কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়ানোর অস্ত্র পেতে চাইছিল। আজ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আম-আদমির জন্য সনিয়া গাঁধীর ‘স্বপ্নের প্রকল্প’, খাদ্য সুরক্ষা বিলে সায় দিল। এ বার বিলটি সংসদে এনে কাঙ্ক্ষিত সেই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে কংগ্রেস। চলতি অধিবেশনেই পেশ হবে এই বিল।
২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগেই কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা ক্ষমতায় এলে দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগ অংশের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে। সে কথা মাথায় রেখে ক্ষমতায় আসার পরে বিলটির খসড়াও তৈরি করা হয়। সনিয়া নিজেই এই প্রকল্পটি রূপায়ণে উৎসাহী ছিলেন। সরকারি হিসেবে, প্রকল্পটি রূপায়ণ হলে গ্রামীণ ভারতের ৭৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলের ৫০ শতাংশ মানুষ এর আওতায় আসবেন। সব মিলিয়ে উপকৃত হবেন দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ। বিলটির খসড়া অনুসারে, এই প্রকল্পে মাসে মাথাপিছু ৭ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের আওতায় যাঁরা আসবেন, তাঁদের ৩ টাকা কেজি দরে চাল, ২ টাকা কেজি দরে গম এবং এক টাকা কেজি দরে অন্য দানাশস্য সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে-মিল প্রকল্প এবং জননী সুরক্ষা যোজনার মতো চালু প্রকল্পগুলি খাদ্য সুরক্ষা বিলের ছাতার তলায় আনা হবে।
এ বছর শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগেই সরকার জানিয়েছিল, খাদ্য সুরক্ষা বিল পেশ করা হবে। কিন্তু গত সপ্তাহেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় আপত্তি জানিয়ে বসেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার। সরকারের প্রধান শরিক তৃণমূল কংগ্রেসও বিলটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নীতি নির্ধারণের জন্য সময় চায়। সে কারণে বিলটি নিয়ে আলোচনা পিছিয়ে দেওয়া হয়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই ঘটনায় রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেন সনিয়া গাঁধী। রাহুল গাঁধীও চাইছিলেন, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের আগে এই অধিবেশনেই বিলটি সংসদে পেশ করা হোক। যাতে নির্বাচনী প্রচারে একে কাজে লাগাতে পারে কংগ্রেস। সেটি সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েও দেওয়া হয়। তার পরেই বিলটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে দ্রুত পেশ করার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি রাশিয়া সফর সেরে দেশে ফেরার পরেই আজ তাঁর বাসভবনে বসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক।
খাদ্য সুরক্ষা বিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাশ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি কংগ্রেস। বিশেষত পাঁচ রাজ্যের ভোটে একে কাজে লাগানো যাবে বলেই আশাবাদী। তবে সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, শুধু শরিকরা নয়, বিরোধীদেরও বিলটি নিয়ে একাধিক সুপারিশ রয়েছে। কয়েকটি জায়গায় আপত্তিও উঠেছে নানা মহল থেকে। যদিও বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় খাদ্যপ্রতিমন্ত্রী কে ভি টমাস বলেন, “আমরা বিলটি নিয়ে শরিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।” সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, বর্তমান অবস্থায় বিলটি সংসদে পেশ হলে তা স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হবে। সেখানে তৃণমূল-সহ সব দলেরই মতামত নেওয়ার একাধিক সুযোগ রয়েছে। যা-ই হোক, এই বিলের মূল কৃতিত্ব কংগ্রেসেরই। এবং উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের প্রচারে সেটা তুলেও ধরবে তারা।
কিন্তু সরকারের চিন্তা অন্য জায়গায়। সরকারের ঘাড়ে যে বিপুল আর্থিক দায় চাপবে, তা কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে? সরকারি হিসেবেই, প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে গেলে বাড়তি ২৭,৬৬৩ কোটি টাকার দায় বহন করতে হবে। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁর আপত্তির যে কারণগুলি দেখিয়েছিলেন, সেগুলিকেও ফেলে দিতে পারছে না সরকার। পওয়ার মূলত দু’টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। প্রথমত, খরা পরিস্থিতিতে ফলন কম হলে কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে? এবং দ্বিতীয়ত, গণবণ্টন ব্যবস্থার হাল না ফিরলে এই লক্ষ্যে কি আদৌ পৌঁছনো যাবে? সব সামাল দিয়ে কী ভাবে প্রকল্পটি রূপায়ণ করা যায়, তা নিয়েই এখন মাথা ঘামাচ্ছেন কংগ্রেস তথা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। |