ছুটির পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের ‘মহালয়া’
ন্ধ্যা তো দূরের কথা, ছুটির দিনের রংচঙে পার্ক স্ট্রিটে বিকেল গড়াতেই তখনও ঢের দেরি।
নোনাপুকুরের মারিয়া ফার্নান্ডেজের ‘চিকেন ভিন্দালু’ বা দমদমের বাসিন্দা মাইকেল তপন গোমসের ‘কোফতা কারি’র ডেকচি তার মধ্যেই চাঁছিপুঁছি সাফ হয়ে গেল। ফুলকপির শিঙাড়ার জন্য হাহাকারও তো কলকাতার এই নরম শীতের আবেশে মিশে। এলিয়ট রোডের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মেয়েদের ঘরোয়া ক্যান্টিনের সৌজন্যে সে বস্তুটিও পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথে উঠে এসেছিল। কিন্তু ওই কয়েক মুহূর্ত। হামলে পড়া জনতার কাড়াকাড়িতে সেটাও নিমেষে সাফ হয়ে গেল।
এ বারই প্রথম ‘পার্ক স্ট্রিট ফেস্টিভ্যাল’-এর সাক্ষী হল কলকাতা। শুধু ভোজ নয়, সঙ্গে নাচ-গান-হুল্লোড়। পশ্চিমবঙ্গে পর্যটনের প্রসারে শহরের সাবেক ‘ফুড স্ট্রিট’ পার্ক স্ট্রিটের মহিমা তুলে ধরতে এ বারই প্রথম উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। আমরি-কাণ্ডের পরে শোকের আবহে এর আগে উৎসবের নির্ঘণ্ট বাতিল করেন উদ্যোক্তারা। তাই বড়দিনের ঠিক এক সপ্তাহ আগের দুপুরটিই উৎসবের সূচনার জন্য নির্দিষ্ট হল। রবিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা সুরে-ছন্দে মেতে হয়ে ওঠে কলকাতার জীবনীশক্তির উৎসব।
উৎসবের সাজে পথে নেমেছে শহর। অ্যালেন পার্কে
‘পার্ক স্ট্রিট ফেস্টিভ্যাল’। রবিবার বিকেলে। ছবি: সুদীপ আচার্য
এ যেন ক্রিসমাসের মহালয়া! পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কের মঞ্চে দুপুরে দুলে দুলে ক্যারল শোনার ফাঁকে উৎসবের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের কানে কানে কথাটা বললেন এক পরিচিত। শুনে হেসে ফেলে ডেরেকের মন্তব্য, “কলকাতার বড়দিন মানেই সকলের উৎসব। সেই সর্বজনীন মেজাজটা ধরতেই এই প্রথম এমন কার্নিভালের আয়োজন করা হল।” পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ জানিয়েছেন, বছর-বছর এই উৎসবের আসর বসবে পার্ক স্ট্রিটে।
বড়দিনের আবাহনে পার্ক স্ট্রিটের মতো মোক্ষম জায়গাই বা শহরে আর কোথায়? গাইতে ওঠার আগে উষা উত্থুপ বলে ফেললেন, “নিজেকে ৪২ বছর আগের উষা আইয়ার মনে হচ্ছে। পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁয় গানই তো আজকের উষা উত্থুপের জন্ম দিয়েছে।” ‘পার্ক স্ট্রিট প্রেমে’ উষার সঙ্গে একেলে শহুরে ব্যান্ড ভূমি-র সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় বা স্যাটারডে নাইট ব্লুজ-এর শওকত আলিদের ‘জেনারেশন গ্যাপ’ নেই। এই রাজপথে খানা-পিনা-আড্ডা-গান শোনার টুকরো-টাকরা স্মৃতিতেই বিকেলটা মশগুল থাকলেন তাঁরা।
অ্যালেন পার্কে ‘ক্রিসমাস ট্রি’র শোভা। রাজপথ জুড়ে জ্যান্ত ‘সান্তাক্লজ’ বা কাঁচুমাচু ‘চার্লি চ্যাপলিন’দের ঘোরাঘুরি। তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে কুচোদের উৎসাহের অন্ত নেই। অ্যালেন পার্ক থেকে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের মোড় পর্যন্ত ফুটপাথে সার সার স্টলে রকমারি খাবার। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রান্নার পসরা সাজিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার এক ক্লাবের কেটারিং-কর্তা মাইকেল তপন গোম্স। ট্যাংরার রেস্তোরাঁর কর্ত্রী মনিকা লিউয়ের চিনে খানার স্টল। এলিয়ট রোডের রেস্তোরাঁর সুবাদে মাংসের ঘুগনি, গোকুল পিঠে, ডালপুরি, শিঙাড়ার আয়োজন। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাদ্যযন্ত্রের দোকানের সুবাদে মারিয়া ফার্নান্ডেজের ঠাকুরদা সেই কবে এ শহরে এসেছিলেন। মারিয়ার দৌলতে গোয়ান রান্না চাখারও সুযোগ পেল এই শহর। নানা মুখরোচক বস্তু পেশ করে পার্ক স্ট্রিটের নামী কনফেকশনারি বা পাঁচতারা হোটেলও। পাঁচমিশেলি খাবারের সমাহারের মতোই মিশে গেল জিঙ্গল বেল থেকে কোলাভেরি ডি-র ছন্দ, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও ‘বারান্দায় রোদ্দুর’-এর সুর। সন্ধ্যা নামতেই রাজপথের ধারে পুলিশি ঘেরাটোপে জনতার উদ্দাম ‘ফ্ল্যাশ ডান্স’।
এ বার বড়দিনের দুপুরেও এই কার্নিভালে একটু বিশেষ ভাবে সাজার কথা পার্ক স্ট্রিটের। চেনা ক্যারলে বরফ ঠেলে সান্তাক্লজের স্লেজ-যাত্রার গান গাইতে গাইতে আসরের এক ব্যান্ড-শিল্পী বলে উঠলেন, “বরফ না পড়লেও ক্রিসমাসের উষ্ণতায় কারও থেকে কম যায় না কলকাতা।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.