এ যেন মরুভূমিতে মরূদ্যান!
শহরের কোনও জনবহুল জায়গায় আগুন লাগলে যেখানে জলের জন্য হাহাকার পড়ে যায়, সেখানে কোলে মার্কেটের মতো ঘিঞ্জি বাজারে কর্তৃপক্ষ তৈরি করে ফেলেছেন দু’লক্ষ লিটারের এক বিশাল ভূগর্ভস্থ জলাধার। বাজার কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই জলাধারের সাহায্যে শুধু কোলে মার্কেটই নয়, আশপাশে আগুন লাগলেও প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করতে পারবেন তাঁরা।
সাম্প্রতিক কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের পরে দমকল-কর্তারা দেখেছেন, কলকাতার বেশির ভাগ বাজারই কার্যত ‘জতুগৃহ’। অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম তো নেই-ই, এমনকী আগুন নেভানোর ন্যূনতম জলের ব্যবস্থাও নেই। এ সবের মধ্যেই ব্যতিক্রমী কলকাতার অন্যতম পুরনো পাইকারি বাজার কোলে মার্কেট। ঘিঞ্জি ওই বাজারে রোজ হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। বিশাল চাতালের মধ্যে বসেন প্রচুর সব্জি-বিক্রেতা। সেখানেই চলে পাইকারি বিকিকিনি। এ রকম ঘিঞ্জি বাজারের মধ্যেই তৈরি হয়েছে ভূগর্ভস্থ বিশাল জলাধারটি। কোলে মার্কেটের ডিরেক্টর বাবলু কোলে বলেন, “গত বছর বাজারের ফায়ার লাইসেন্স নবীকরণের সময়েই আমরা দমকলের অনুমতি নিয়ে পুরো কাজটা করেছি। দমকলের ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ অনুসারেই কাজ হয়েছে। এই ট্যাঙ্কে প্রায় দু’লক্ষ লিটার জল রাখা যায়। জলাধার থেকে পাইপলাইন বাজারের চার দিক ঘিরে আছে।”
বাবলুবাবু আরও জানিয়েছেন, ওই জলাধারের সঙ্গে পাইপলাইন সংযোগে ১৬টি আউটলেট রয়েছে। বাজার কর্তৃপক্ষের দাবি, বাজারে কোনও কারণে আগুন লেগে গেলে জলের জোগানের অন্তত অভাব হবে না। এমনকী, কোলে মার্কেট লাগোয়া কোনও বাজার বা অন্য কোথাও আগুন লাগলেও এখান থেকে জল নেওয়া যাবে, বলছেন তাঁরা। |
কোলে মার্কেটের সেই ভূগর্ভস্থ জলাধার। ছবি: দেবাশিস রায় |
কাছাকাছি জলাধার বলতে এনআরএস হাসপাতাল। এ ছাড়া, শিয়ালদহ অঞ্চল কার্যত নির্জলাই বলা যায়। কয়েক বছর আগে বৈঠকখানা রোডে অগ্নিকাণ্ডের সময়েও দমকলকে জল আনতে হয়েছিল এনআরএস থেকে। কোলে মার্কেটের কাছেই বৈঠকখানা বাজারের এক ব্যবসায়ী রাহুল দত্ত বলেন, “কোলে মার্কেটের ওই জলাধার আমাদেরও অনেকটা নিশ্চিন্ত করেছে। আগুন লাগলে দ্রুত জল দেওয়ার ব্যবস্থা আছে ওখানে।” বৈঠকখানা বাজার সূত্রে জানা গেল, নভেম্বর মাসে বৈঠকখানা রোডে ছোটখাটো আগুন লাগে। তা ছড়িয়ে পড়েনি ঠিকই, কিন্তু কোলে মার্কেট আগুন নেভানোর জন্য জল সরবরাহের জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল।
কোলে মার্কেটের চিফ সুপারভাইজার উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “জলাধারের চার দিকে ১৬টি আউটলেটের মধ্যে বাজারের সামনে বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও সার্পেন্টাইন লেনের দিকেও রয়েছে দু’টি আউটলেট। সেগুলি দিয়ে দ্রুত বাইরের বাজারে জল সরবরাহ করা যাবে।” বাজার ঘুরে দেখা গেল, ভূগর্ভস্থ পাম্পের উল্টো দিকেই কন্ট্রোল রুমে রয়েছে জেনারেটর, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। বাজার কর্তৃপক্ষ জানালেন, প্রতি মাসে জলাধার পরিষ্কার করে নতুন জল ভরা হয়। বাজারের ইলেকট্রিক সুপারভাইজার কমল সরকার বলেন, “আগুন কী ভাবে তৎপরতার সঙ্গে নেভানো যায়, তার প্রশিক্ষণও নেওয়া আছে কয়েক জন কর্মীর। দরকারে পাশের বাজারগুলিতে জল সরবরাহ করার প্রশিক্ষণও আছে আমাদের।” |