ঢোকা আর বেরোনোর যথাযথ রাস্তা নেই। অপরিসর সিঁড়ি। তার উপরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গ্যাস জ্বেলে চলে রান্নাবান্না। বিপদ ঘটার সম্ভাবনা প্রতি পদে। কিন্তু আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। আগুন এক বার লাগলে অপরিসর সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে মহিলা, বয়স্ক ও শিশুদেরই বিপদের সম্ভাবনা অধিক।
বেনাচিতির জেকে পাল গলি, পশুপতি মার্কেট এবং ভিড়িঙ্গি কালীবাড়ি এবং অন্য দিকে দুর্গাপুর বাজারের এসবি মোড়, সগড়ভাঙা সংলগ্ন প্রায় সব ক’টি অনুষ্ঠান বাড়ির চিত্র এমনই।
দেরিতে হলেও আমরি-কাণ্ডের পরে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে দমকল। ঠিক হয়েছে, ২০০৫ সালের আগে নির্মিত অনুষ্ঠান বাড়িগুলিতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবে তারা। দুর্গাপুর দমকলের ওসি নিতাই চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই সমস্ত বাড়িতে আগাম নোটিস পাঠিয়ে অভিযান চালানো হবে। তাঁর কথায়, “পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও ফল না পেলে বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনই একটি অনুষ্ঠান বাড়ির মালিক বললেন, “এত দিন এ সব নিয়ে কোনও হইচই হয়নি। তাই সুরক্ষা বিধি মেনে চলার কথা মনে হয়নি। এখন যদি আইন হয়, আমরা সেই মতোই ব্যবস্থা করব।”
শহর ঘুরে দেখা গিয়েছে, সিটি সেন্টার, বেনাচিতি, বিধান নগরে একাধিক বড় হোটেল সংলগ্ন অনুষ্ঠানবাড়ি রয়েছে। এগুলি হোটেল কর্তৃপক্ষেরই। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান হয়ে থাকে বাড়িগুলিতে। তবে দমকলের প্রয়োজনীয় অনুমতি এঁদের আছে বলে জানিয়েছেন দমকলের ওসি। ইস্পাত কলোনিতে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার একাধিক অনুষ্ঠান বাড়ি রয়েছে। প্রধান রাস্তার ধারে অবস্থিত একতলা ওই বাড়িগুলিতে ঢোকা বেরোনোর পর্যাপ্ত জায়গা আছে। সামনে পিছনেও অনেকটা করে ফাঁকা জায়গা। কাজেই এ সমস্ত বাড়িতে আগুন লাগলে তা নেভাতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না দমকলকে। কিন্তু দমকলের মাথাব্যথা মূলত বেনাচিতি, দুর্গাপুর বাজারের মতো ঘিঞ্জি এলাকার পুরনো অনুষ্ঠান বাড়িগুলি নিয়েই।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন দমকল আইন চালু হওয়ার পরে অর্থাৎ ২০০৫ সাল থেকে শহরে সাড়ে ১৪ মিটারের বেশি উচ্চতার কোনও বাণিজ্যিক বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার আগে কঠোর ভাবে যাচাই করে নেওয়া হয় দমকলের শংসাপত্র আছে কি না। তা সে হাসপাতাল হোক বা স্কুল, বা হোক কমিউনিটি সেন্টার। মেয়র রথীন রায়ের কথায়, “তিন তলার বেশি উঁচু নতুন বাড়ি তৈরি করতে গেলে আমাদের কাছে দমকলের অনুমতিপত্র জমা দিতে হয়। না হলে তা অনুমোদন করা হয় না।”
কাজেই নতুন গড়ে ওঠা অনুষ্ঠান বাড়িগুলির ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা নেই। তবে পুরোনো বাড়িগুলির পরিস্থিতি কতটা নিরাপদ তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দমকলের।
দেরিতে হলেও সবার যদি ঘুম ভাঙে, ক্ষতি কি? |