‘আত্মসমর্পণ’ করতে এসেছিলেন দামি পোশাক পরে, বিদেশি গাড়ি চড়ে। কিন্তু লক আপ-এর খাকি হাফপ্যান্ট-ফতুয়া পরে, কম্বলে শুয়েই রাত কাটাতে হল তাঁদের। রাতে খেলেন শুধু পুলিশের দেওয়া বিস্কুট আর জল।
আমরি অগ্নিকাণ্ডে অভিযুক্তদের ছ’জনকে শুক্র ও শনিবারের দু’টো রাত ‘আম আদমি’র মতোই লালবাজারের সেন্ট্রাল লক আপে কাটাতে হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কড়া’ নির্দেশের কারণেই ‘প্রভাবশালী’ কোনও মহলের ‘অনুরোধ’ শুনে তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়নি বলে মত পুলিশকর্মীদের একাংশের। দোতলার একটি বড় ‘সেল’-এ তাঁরা একসঙ্গেই রয়েছেন।
শুক্রবার, ঘটনার দিনই হাসপাতালের সাত কর্তা এস কে তোদি, আর এস গোয়েন্কা, মণীশ গোয়েন্কা, প্রশান্ত গোয়েন্কা, রবি তোদি, ডি এন অগ্রবাল এবং রাধেশ্যাম অগ্রবালকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। চিকিৎসার কারণে রাধেশ্যাম আগে থেকেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। বাকি ছয় ‘হাই-প্রোফাইল কয়েদি’র সঙ্গে দেখা করতে লালবাজারের বাইরে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ছিল গাড়ির লম্বা লাইন। কিন্তু কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ অভিযুক্ত ছ’জনকে সেন্ট্রাল লক আপ-এর দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে দীর্ঘ ক্ষণ তাঁরা ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগে। তখন তাঁদের বাড়ি থেকে পাঠানো ‘ভাল-মন্দ’ খাবার খাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। এর পরে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে তাঁদের শারীরিক অবস্থারও পরীক্ষা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, লক আপ-এ নিয়ে যাওয়ার পরে ‘নিয়ম’ মেনে তাঁদের দেওয়া হয় খাকি ফতুয়া ও হাফ-প্যান্ট। সন্ধ্যায় বাড়ির খাবার খেয়েছিলেন বলেই লক আপ-এ আর ‘নৈশভোজ’ না করে হাল্কা জল-বিস্কুট খান তাঁরা। অল্প শীত পড়েছে বলে অন্য কয়েদিদের মতো তাঁদেরও দেওয়া হয় দু’টি কম্বল। একটি মেঝেতে পেতে শোওয়ার জন্য, অন্যটি গায়ে দেওয়ার জন্য। এ ভাবে থাকতে যে তাঁদের রীতিমতো ‘অস্বস্তি’ হচ্ছিল, তা বেশ বোঝা যাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন লালবাজারের পুলিশকর্মীরাই।
শনিবার সকাল সাতটা নাগাদ অভিযুক্তদের বিস্কুট ও চা দেওয়া হয়। এর ঘণ্টা দুই-আড়াই পরে ভাত-ডাল ও সব্জি দেওয়া হয় তাঁদের। কিন্তু কয়েদিরা সে সব মুখে তোলেননি। কিছু ক্ষণ পরে প্রিজন ভ্যান-এ চড়িয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী তাঁদের বার করে লালবাজার থেকে। দ্বিতীয় দফায় স্বাস্থ্য-পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মেডিক্যাল কলেজে। পরের গন্তব্য ছিল আলিপুর আদালত। আদালত থেকে ফেরার পর গোয়েন্দা বিভাগে জেরার সময়ে ফের খাবার আসে বাড়ি থেকে। সেই ‘অজুহাতে’ এ দিন রাতেও তাঁরা লক আপ-এর খাবারটা প্রত্যাখ্যানই করেন। |