চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল পরিকাঠামো মজুত,
তবু বেহাল পরিষেবা
রাজ্য সরকারের ‘চাপে’ ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে আসছেন অধিকাংশ চিকিৎসকই। জেলা হাসপাতাল হওয়ায় পরিকাঠামোর দিক থেকেও খুব একটা খামতি নেই। কিন্তু পরিষেবা কতটা বেড়েছে হুগলির চুঁচুড়া ইমামবাড়া (সদর) হাসপাতালে? রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের বক্তব্য, পরিষেবা মেলে নামমাত্রই।
এক্স-রে, আলট্রা-সোনোগ্রাফি থেকে শুরু করে ইসিজি, স্ক্যান-সহ নানা প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা হওয়ার কথা এই হাসপাতালে। কিন্তু এখানে আসা বহু মানুষকে প্রতিদিন আশপাশের বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল কেন্দ্রগুলি থেকে পরীক্ষা করাতে দেখা যায়। অনেক রোগীরই বক্তব্য, “অনেক ডাক্তারবাবুই বাইরে থেকে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। অথচ, কর্তৃপক্ষের নজর পড়ে না।’’
শুধু রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করানোই নয়, বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কেনানোর প্রবণতাও যায়নি কিছু চিকিৎসকের। অভিযোগ এমনই। বিশেষত, হাসপাতালে ওষুধ থাকলেও এক স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ সব পরিস্থিতিতেই বাইরে থেকে ওষুধ কেনার ‘নির্দেশ’ দেন বলে অভিযোগ। তাঁর লেখা ওষুধ আবার বিশেষ কিছু দোকান ছাড়া পাওয়াও যায় না। বিনিময়ে ওই সব দোকান থেকে ‘মোটা কমিশন’ পান ওই চিকিৎসক অভিযোগ এমনই।
অনেক ক্ষেত্রে আবার অস্ত্রোপচারের জন্য চিকিৎসকের গ্লাভস থেকে শুরু করে সেলাই করার সুতো সবই কিনে দিতে হয় রোগীর বাড়ির লোককে। পোলবার সুগন্ধ্যার বাসিন্দা বাবলু দাস বলেন, “মাস দু’য়েক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করাই। এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আমাকে পরিষ্কার বলেন, এখানে চিকিৎসা করিয়ে কিছু হবে না। নার্সিংহোমে করান। উনি বাবাকে দেখতেই চাইতেন না। এই পরিস্থিতিতে বাবাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাই। এখন অন্য চিকিৎসককে দেখাচ্ছি। বাবা এখন যথেষ্ট সুস্থ।”
হাসপাতাল সূত্রেই খবর, হাসপাতালে ‘ডিউটি’ চলাকালীন নিজের চেম্বারে রোগী দেখেন এক চক্ষু-বিশেষজ্ঞ। তাঁর মতোই আরও দু’-একজনের কাছেও এটাই নিয়ম। অভিযোগ, বেশির ভাগ চিকিৎসক রোগী দেখেন দায়সারা ভাবে। মাঝেমধ্যেই রাতে ‘কলবুক’ পাঠানোর দীর্ঘক্ষণ পরে তাঁরা ওয়ার্ডে আসেন। কখনও আবার চিকিৎসকের দেখা মেলা ভার। লোডশেডিং হলে জেনারেটরের সাহায্যে পাখা-আলো জ্বললেও লিফ্ট চলে না। রোগীদের ওঠানামা করতে সমস্যায় পড়তে হয়। অভিযোগ রয়েছে নার্সদের ব্যবহার নিয়েও।
বিশাল এলাকা জুড়ে এই হাসপাতাল। গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতাল চত্বর বেশ সাফসুতরো। কর্মীরা জানাচ্ছেন, কানাঘুষোয় তাঁরা শুনেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলায় আসার কথা ছিল বলেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে গোটা চত্বর। বাইরের চেহারায় বদল এলেও, ভিতরের অবস্থাটা প্রায় একই রকম রয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
চালু না হওয়ায় দীর্ঘ আট বছর ধরে পড়ে আছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বিভাগটি। সেই ঘরটি চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখার গুদামে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষী নেই বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ির দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু তা হয়নি।
হাসপাতাল সুপার শ্যামলকুমার চক্রবর্তী বলেন, “পরিকাঠামো এবং পরিষেবাগত কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, ঠিকই। তবে বর্তমানে সমস্যা অনেকটাই শুধরে নেওয়া গিয়েছে। আরও উন্নতির চেষ্টা চলছে। রোগীদের সুষ্ঠু পরিষেবা যাতে কোনও ভাবেই ব্যাহত না হয়, সেই দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।”
হাসপাতালের সুপারের আক্ষেপ, “এখানে সব থেকে বড় সমস্যা লোকবল। যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হয়, সেই তুলনায় চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা খুবই কম।” এই সমস্যা মিটলে ত্রুটি-বিচ্যুতি অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.