অ্যাসিড-কাণ্ডে অভিযুক্ত আয়া ধৃত লালবাগে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লালবাগ |
লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ‘অ্যাসিড-কাণ্ডে’ অন্যতম অভিযুক্ত ঊষা হাজরাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তিনি ওই হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে আয়ার কাজ করতেন। সোমবার রাতে লালবাগে ওই মহিলার বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার সকালে লালবাগ এসিজেএম আদালতে ঊষাদেবীকে হাজির করানো হলে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সত্যজিৎ মাইতি ওই মহিলাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৩১ অক্টোবর মুর্শিদাবাদের ওই সরকারি হাসপাতালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন শিখা বিবি। দুপুরের দিকে সন্তান প্রসবের ওই মহিলাকে সাফ-সুতরো করতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। কর্তব্যরত নার্স প্রসূতি সদনের ঘরের কোণায় রাখা একটি শিশি দেখিয়ে ঊষাদেবীকে পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই শিশিতে জীবাণুনাশকের বদলে অ্যাসিড ছিল বলে অভিযোগ। সাফ-সুতরো করার সময়ে সেই ‘অ্যাসিড’ ব্যবহারের ফলেই শুধু শিখা বিবি নন, ঝলসে গিয়েছিল তাঁর সদ্যোজাতের দেহও। হাসপাতাল সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছিল, ওই মহিলা একটি মৃত-সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। তবে অ্যাসিডে দগ্ধ হয়েই শিশুটি মারা গিয়েছিল কিনা তা ময়নাতদন্তে স্পষ্ট হয়নি। |
ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঊষা হাজরার বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পাশাপাশি, শিখা বিবির পরিবারও থানায় অভিযোগ করে। সেখানে অবশ্য ঊষা হাজরা ছাড়াও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নির্মলকুমার সাউ এবং কর্তব্যরত নার্স শ্যামলী কর্মকারের নাম ছিল। ঘটনার পরেই পুলিশের পরিভাষায় ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিলেন ঊষা। মুর্শিদাবাদ থানার আইসি ইন্দ্রজিৎ কুণ্ডু বলেন, “সোমবার রাতে লালবাগের বাড়িতে এসেছিল ওই আয়া। খবর পেয়ে বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।”
সরকারি আইনজীবী সঞ্জীবকুমার বর্মন বলেন, “ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী ওই মহিলার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ দিন ধৃত ওই মহিলাকে আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তার ১৪ দিন জেল হাজত দিয়েছেন।”
ঘটনার পরেই হাসপাতালের ওই গাফিলতি ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। ঘটনার দু-দিন পরে অর্থাৎ ১ নভেম্বর বিষয়টি জানাজানি হতেই তিন জন চিকিৎসককে নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তড়িঘড়ি তদন্তের নির্দেশ দেয় লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ‘লেবার রুমে’ যে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়, আদতে সেটিতেই অ্যাসিডের মাত্রা বেশি ছিল কিনা, তা জানতে ওই লোশনটিও পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।
এর পরেই গত ৩ নভেম্বর নার্স শ্যামলী কর্মকারকে ‘সাময়িক ভাবে বরখাস্ত’ করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে ওই মহিলার সদ্যোজাত শিশুটিও অ্যাসিড দগ্ধ হয়েই মারা গিয়েছিল কিনা তা জানতে গত ৪ নভেম্বর কবর থেকে তার দেহটি তুলে ময়নাতদন্ত করানো হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত শিশুর চোখের চারপাশে, গলায়, মুখে ও দেহের বেশ কিছু জায়গায় রাসায়নিকে পোড়ার দাগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এর পরেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও পৃথক ভাবে তদন্ত শুরু করে। ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য দফতরের উপ-সহ অধিকর্তা (স্বাস্থ্য প্রশাসন) অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক (ত্বক বিভাগ) নিলয় দাস লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। তাঁদের রিপোর্টও জমা পড়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে তা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। |