শহরে ঢুকতেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য তোরণ! কোথাও রাস্তার ধারে রঙিন আলোয় বর্ণময় হয়ে উঠবে ফোয়ারা! ভাঙাচোরা কংক্রিটের ঢাকনা দেওয়া ফুটপাতের বদলে বাহারি ‘টাইলস’-এর উপর দিয়ে হেঁটে যাবেন পথচারীরা। জং ধরা, বিবর্ণ চেহারার বদলে নকশা করা রেলিং দিয়ে ঘেরা থাকবে ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ। সন্ধ্যা হতেই আলো জ্বলে উঠলে নজর কাড়বে কারুকার্য করা পথবাতিগুলি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর-সহ পুরসভা এবং শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এক যোগে শিলিগুড়ি শহর সাজাতে ওই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকারের নগরোন্নয়ন দফতরও। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। শহর সাজানোর বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে আজ, বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে আসছেন নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব দেবাশিস সেন। পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “শিলিগুড়ি শহরকে সাজিয়ে তুলতে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। দফতরের তরফেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরসভা এবং এসজেডিএ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে ওই কাজ করা হবে। দেশ বিদেশের পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে এই শহরে। শহরের সৌন্দর্যায়ন তাই অত্যন্ত জরুরি।” মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানিয়েছেন, পুরসভার মেয়র পারিষদদের কাছে শহর সাজাতে নতুন কোনও প্রস্তাব থাকলে জানাতে বলা হয়েছে। নাগরিক কনভেনশন করে বাসিন্দাদের পরামর্শও চাওয়া হবে। ওই কাজে এসজেডিএ অগ্রণী ভূমিকা নেবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। কী ভাবে সাজিয়ে তোলা হবে শহরকে? উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে পরিকল্পনাগুলি ভাবা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে শহরের প্রবেশ পথে দার্জিলিং মোড়, নৌকাঘাট মোড়, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে যাতায়াতের রাস্তায় সুদৃশ্য তোরণ তৈরি। এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেন মেয়র। দার্জিলিং মোড়ে তেনজিং নোরগের মূর্তি লাগোয়া একটি পার্ক তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। সেখানে ‘রক ক্লাইম্বিং ওয়াল’ তৈরি করা হবে। পুরসভার চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব নান্টু পাল বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের তরফেও ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেখানে উৎসাহীদের পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। মাল্লাগুড়ি মোড় সাজিয়ে তুলতে ফোয়ারা বসানোর কথা ভাবা হয়েছে। হিলকার্ট রোড, সেবক রোড, বিধান রোডের ফুটপাতের অংশে রঙিন টাইলস বসানো হবে। ওই রাস্তাগুলিতে যাত্রী প্রতিক্ষালয়গুলির সৌন্দর্যায়ন করা হবে। কোর্ট মোড়, হাসমি চক, সেবক মোড়, মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়, পানিট্যাঙ্কি মোড় এলাকায় নকশা করা বাহারি রেলিং লাগানো হবে। থাকবে নজরকাড়া বাতিস্তম্ভ। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন যাতায়াতের রাস্তাও একই ভাবে সাজিয়ে তোলা হবে। নোংরা আবর্জনা ফেলতে রাস্তার ধারে নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে। মহানন্দা সেতু লাগোয়া হিলকার্ট রোড এবং বর্ধমান রোডের সংযোগ স্থলে পথচারীদের জন্য ফুটব্রিজ করার কথা। আরেকটি ফুটব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সেবক মোড়ে। তাতে এসকালেটর ব্যবস্থা করার কথা। শহর যানজট মুক্ত করা এবং পার্কিংয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করার জন্য চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। শহরের সৌন্দর্যায়নে বাধা হবে এমন কোনও হোর্ডিং বা ব্যানার থাকলে তা খুলে নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে পুরসভার তরফে নজরদারি চালানো হবে। এত কিছু করেও মুখরক্ষা হবে না যদি না শহরের ঢোকার মুখে মহানন্দা সেতু এলাকায় নদীর চর থেকে খাটাল সরানো না হয়। ওই কাজে তাই উদ্যোগী হতে চান পুর কর্তৃপক্ষও। শহরের বিভিন্ন জায়গায় সুলভ শৌচালয় গড়ে তোলা যে বিশেষ জরুরি তা পরিকল্পনার মধ্যে রাখা হবে। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নদী ঘাট সাজানো এবং চর এলাকায় পার্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। |