রাস্তা সংস্কারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের গাড়ি ধমর্ঘট শুরু হয় পাহাড়ে। আবার একই দিনে কর্মী নিয়োগের দাবিতে বিডিও দফতরে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনও শুরু হয়েছিল দার্জিলিং পাহাড়ে। গত সোমবার থেকে শিলিগুড়ি-দার্জিলিং রুটে ওই গাড়ি ধমর্ঘটে সরাসরি মোর্চা কর্মীরা ময়দানে না নামলেও বিডিও অফিসগুলিতে মোর্চা কর্মীরা পতাকা, ব্যানার নিয়ে তালা দেন। প্রশাসনের আশ্বাসের পরেও আন্দোলনকারীরা অনড় থাকায় রাজ্য সরকারের তরফে উদ্বেগ জানানোয় আসরে নেমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। মঙ্গলবার তাঁর হস্তক্ষেপে দুটি আন্দোলন স্ঘতিত রাখলেন আন্দোলনকারীরা। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “দলীয় সভাপতির সঙ্গে গাড়ির চালকদের সংগঠনের বৈঠক হয়েছে। তাতে উনি ধর্মঘট তুলে নিতে বলেন। তার পরেই গাড়ি ধমর্ঘট আপাতত স্থগিত হয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আশা প্রকল্পে সুষ্ঠু কর্মী নিয়োগের আশ্বাস মিলেছে। তাই বিডিও অফিস বন্ধ রাখা হচ্ছে না। আজ, বুধবার থেকে বিডিও অফিসগুলিতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হবে।” শিলিগুড়ি-দার্জিলিংগামী ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক খোলা, রোহিণী রোড সংস্কারের দাবিতে গাড়ি চালকদের দুটি সংগঠন দার্জিলিং-শিলিগুড়ি রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধমর্ঘটের ডাক দেয়। সোমবার প্রশাসনের তরফে রাস্তা দুটি সংস্কারের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। তার পরে মুখে ধমর্ঘটের কথা না বললেও পিকেটিং-এর রাস্তা থেকে সরে আসেন আন্দোলনকারীরা। এদিন সকাল থেকে শিলিগুড়ি, কার্শিয়াং, দার্জিলিং স্ট্যান্ডের গাড়ি চলাচল না হওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে পর্যটকেরা। কিছু গাড়ি চললেও চালকেরা মর্জিমাফিক ভাড়া নেওয়ায় সমস্যা আরও বাড়ে। তার উপরে মহরমের দিন গাড়ি কম থাকায় সমস্যায় পড়েন অনেকে। ইতিমধ্যে মহাকরণে খবর পৌঁছয়। |
মহাকরণ থেকে বিমল গুরুঙ্গকে বার্তা পাঠিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পরিস্থিতি সামলাতে পাতলেবাসে দলীয় দফতরে চালক সংগঠনের নেতাদের ডেকে পাঠান বিমল গুরুঙ্গ। প্রথমে দুপুর ১২টা’র মধ্যে ধমর্ঘট তুলে নেওয়ার কথা বলেন। পরে তা তিনি আপাতত তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে রোহিণী রোডের বদলে পাঙ্খাবাড়ি ও মিরিক রোড ব্যবহারের কথা বলেন। শিলিগুড়ি-দার্জিলিং মেন লাইন ট্যাক্সি ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবীন্দ্র গুরুঙ্গ বলেন, “মোর্চা সভাপতির নির্দেশে ধমর্ঘট স্থগিত করে দিয়েছি। ৮ ডিসেম্বর জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পর পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” একই কথা জানিয়েছেন তরাই চালক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সবিন থাপাও। এই দুটি সংগঠনই ধমর্ঘটের ডাক দিয়েছিল। আপাতত ঠিক হয়েছে, দার্জিলিং থেকে পাঙ্খাবাড়ি রোড হয়ে গাড়িগুলি শিলিগুড়ি আসবে। যাত্রী পিছু ভাড়া হবে ১০০ টাকা। মিরিক রোড হয়ে গাড়ি দার্জিলিঙে যাবে। সেখানে ভাড়া হবে ১৪০ টাকা। এদিন সকালে পঞ্চনই এলাকায় চালকদের একাংশ কিছু গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়। রোহিণী রোডে চালক সংগঠনের সদস্যরা কালো ব্যাজ পরে, মুখে কালো কাপড় পরে প্রতিবাদ করেন। পাশাপাশি, যে গাড়িগুলি চলেছে তাঁদের চালককে মিষ্টি খাইয়ে, খাদা পরান। জেলা পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার বলেন, “জোর করে গাড়ি আটকানো হয়নি। বহু গাড়ি চলেছে।” পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরের গর্ভবতী মায়েদের প্রশিক্ষণের কাজে নিযুক্ত আশা কর্মীদের শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে পাহাড়ে ৮টি বিডিও অফিসে তালা ঝোলায় মোর্চা। ১৪৪০টি শূন্যপদ পূরণ এবং কর্মী নিয়োগের দাবি তোলা হয়। অনির্দিষ্টকালে এই দফতর বন্ধের কথা বলা হলেও এদিন সকালে জেলাশাসক এবং পার্বত্য পরিষদের প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোর্চা নেতৃত্ব। তার পরেই বিডিও অফিস খোলার কথা ঘোষণা করে মোর্চা। |