ফের ‘মৌখিক পরীক্ষা’ দিতে হতে পারে গত বছর জলপাইগুড়ি জেলায় প্রাথমিক স্কুলে নিযুক্ত শিক্ষকদের। তার আগে নিযুক্ত সব শিক্ষকের পরীক্ষার খাতা ফের দেখা হবে। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে ওই সিদ্ধান্ত জানানোর পরে তা বাস্তবায়িত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি বছরে রাজ্যে পালাবদলে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত জুলাই মাসে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা সংসদ সিদ্ধান্ত নেয়, নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি যে-শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক ‘চার্জ’ গঠন করবে। কিন্তু, বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে কয়েকটি মামলা হয়ে যায়। তার পরে সেই সিদ্ধান্ত বদল করে নিযুক্ত ১৪১১ জন শিক্ষকের খাতা ফের দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খাতা দেখে সন্তুষ্ট না-হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ফের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান।
স্কুল শিক্ষা দফতরের এই প্রক্রিয়া চলতে থাকার পাশাপাশি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল পুরো বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে সওয়াল করবেন। জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি তথা জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) উৎপল বিশ্বাস বলেন, “স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশ মতো ১৪১১ জন নবনিযুক্ত শিক্ষকের পরীক্ষার খাতা কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি খাতা আবার দেখা হবে। প্রয়োজনে নবনিযুক্তদের সব যোগ্যতা যাচাই করে দেখা হবে।”
রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নবনিযুক্ত শিক্ষকদের একাংশের নিয়োগের পরীক্ষার খাতায় নম্বর না-থাকা, থাকলেও তার সঙ্গে মূল নম্বর তালিকার সামঞ্জস্য না-থাকা, খাতা খুঁজে না-পাওয়ার মতো অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে মূল অভিযোগ হল, বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়া। খাতা দেখার প্রক্রিয়ায় যাঁরা প্রাপ্যের অধিক নম্বর পেয়েছেন বলে প্রমাণিত হবে তাঁদের ফের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁদের খাতার নম্বরের সঙ্গে মূল তালিকায় থাকা নম্বরের সামঞ্জস্য নেই, তাঁদেরও ফের পরীক্ষায় বসতে হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
গত বছর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তৈরি করা নিয়োগের প্যানেল প্রকাশ হতেই জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খোদ সংসদের তৎকালীন চেয়ারম্যানের স্ত্রী থেকে শুরু করে সিপিএমের তাবড় নেতাদের আত্মীয়ের নাম প্যানেলে থাকায় স্বজনপোষণের অভিযোগে শুরু হয় বিক্ষোভ। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভকারীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কার্যালয় অবরোধ করে রাখেন। ক্ষোভ সৃষ্টি হয় তৎকালীন শাসক দল সিপিএমের অন্দরেও। আন্দোলনের চাপে রাজ্য সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। শো-কজ করা হয় ৪২৩ জন নবনিযুক্ত শিক্ষককে। সংসদের তৎকালীন চেয়ারম্যানকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়। অবনমন করা হয় সংসদের সচিবকে। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা এ দিন টেলিফোনে জানান, নতুন করে তদন্ত কমিটি করে ফের খাতা দেখানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে রাজ্য সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে। |