তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলা। জখম হয়েছেন ১৪ জন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোড ব্লকের গুয়াইদহে সোমবার রাত থেকে এলাকা-দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ৪ জন জখম হয়েছেন। সব জেনেও দলের জেলা নেতৃত্ব ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড সড়ক অবরোধ করে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভও দেখান দলের এক গোষ্ঠীর কর্মীরা। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের কৃষ্ণপুর-ঘেঁষা ডিঙাপুরেও তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়ছে। সোমবার রাতেই সেখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরে প্রায় ৩০টি ধানের গোলায় আগুন লাগানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। প্রায় একশো কুড়ি বিঘা জমির ধান এর ফলে নষ্ট হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান। ঘাটাল থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন গিয়ে আট ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। ধান এ ভাবে নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত তৃণমূল সমর্থক চাষি সুনীল ঘোষ, বংশীবদন খানেদের। দলীয় কোন্দলেই তাঁদের এই ক্ষতি বলে জানান সুনীলবাবুরা। এ দিনও উত্তেজনা ছিল ডিঙাপুরে। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভের পাশাপাশি পুলিশের সামনেই হাতাহাতিতে জড়ান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। জখম হন কয়েক জন। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে ক্ষীরপাই ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করায়। এসপি প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “ডিঙাপুর থেকে ৪ জনকে ধরা হয়েছে। অন্যদেরও খোঁজ চলছে।” তৃণমূলের স্থানীয় নেতা বিশ্বজিৎ হাজরার অভিযোগ, “দলেরই একাংশ গোলমাল, অগ্নিসংযোগে জড়িত।” জেলার একের পর এক ব্লকে দলের গোষ্ঠীবিবাদ নিয়ে বিড়ম্বিত তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য “গুয়াইদহে নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল। দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হবে।” ডিঙাপুর প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “দলের ব্লক সভাপতিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ধান গোলায় আগুন বা সংঘর্ষে দলের কেউ জড়িত থাকলে বহিষ্কার করা হবে।” |
অন্য দিকে, হুগলির খানাকুল ১ ব্লকের অরুন্ডা পঞ্চায়েতের লাউসর গ্রামে সোমবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে ১০ জন জখম হন। একশো দিনের কাজ প্রকল্পের সুপারভাইজার নিয়োগকে ঘিরে সেখানে বিবাদ। মঙ্গলবার থেকে স্থানীয় ১০০ দিনের কাজ শুরুর কথা ছিল। তবে দুই গোষ্ঠীর কাজিয়ায় সেই কাজ শিকেয় উঠেছে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছে। পুলিশ ৭ জনকে গ্রেফতার করে। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, সুপারভাইজার নিয়োগ-সহ নানা বিষয়ে অশান্তি চলছেই। তার জেরে ব্লকে ১০০ দিনের কাজ ব্যাহত। বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েত আমাকে কিছু জানায়নি। তবে, এমন হলে সব পক্ষকে নিয়ে বসে দ্রুত সমস্যার সমাধানের নির্দেশ দেওয়া আছে। প্রয়োজনে আমরাও যাব।” খানাকুলের তৃণমূল নেতা শৈলেন্দ্র সিংহ গোষ্ঠী সংঘর্ষের কথা মেনে নিয়ে বলেন, “মহকুমায় একটি পঞ্চায়েত ছাড়া সবই ক্ষমতা সিপিএমের হাতে। কৌশলে তৃণমূলের মধ্যে বিভাজন করতে চাইছে সিপিএম।” সিপিএম নেতা প্রশান্ত মালিক বলেন, “আমাদের আবেদন, কাজ যাতে বন্ধ না হয়। শীঘ্রই যেন কাজ শুরু হয়।” |