সরাসরি টাকা জোগানোর পথ বন্ধ করতে চাইলেও রাজ্যের রুগ্ণ পাঁচ পরিবহণ নিগমকে এ বার ‘ঘুরপথে’ ভর্তুকি দিতে চলেছে সরকার। স্থির হয়েছে, ওই পাঁচ সংস্থার বাস থেকে আর টোল আদায় করা হবে না।
এবং এই ব্যবস্থায় পাঁচটি পরিবহণ সংস্থার সাশ্রয় হবে বছরে ৪ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন জাতীয় সড়ক ও সেতুতে তাদের থেকে টোল বাবদ সংগৃহীত যে অর্থ এত দিন মূলত রাজস্ব হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা পড়ত। অর্থাৎ, নিগমগুলোকে এ বার ঘুরিয়ে ওই প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ‘পাইয়ে দিচ্ছে’ রাজ্য সরকার।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর: পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে একাধিক সরকারি পরিবহণ নিগমকে টোল ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই মতো কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি)-র বাস থেকে টোল আদায় বন্ধও করে দিয়েছিল হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি), পূর্ত দফতর ও জাতীয় সড়ক-কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)। ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত এমনটাই চলছিল। পরে নানা জটিলতায় টোল-ছাড়ের ব্যবস্থা উঠে যায়। নতুন সরকার তা ফিরিয়ে আনছে। শুধু তা-ই নয়, এ বার টোল ছাড়ের সুবিধা পাবে পাঁচটি পরিবহণ নিগমই। তা কী ভাবে কার্যকর হবে?
পরিবহণ দফতরের এক অফিসার বলেন, “ওই পাঁচটি নিগমের বাসে থাকবে স্মার্ট কার্ড। তার সাহায্যে বাসগুলো বিভিন্ন চেকপোস্ট পেরিয়ে যেতে পারবে।”
সরকারি পরিবহণের বাসকে এখন কোথায় কোথায় টোল দিতে হয়?
সিটিসি-সূত্রের খবর, তাদের বাসগুলোকে টোল দিতে হয় মূলত বিদ্যাসাগর সেতু, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ও ডেবরায় মুম্বই রোডে। কলকাতা-ধুলাগড়, কলকাতা-জাঙ্গিপাড়া, কলকাতা-আমতা, কলকাতা-বাগনান প্রভৃতি রুটের বাস থেকে ওই টাকা আদায় করা হয়। বিদ্যাসাগর সেতুর টোল-গেট পেরোতে প্রতিটি বাসকে প্রতি বার ৫০ টাকা দিতে হয়। অন্যান্য টোল-গেটে বাসপিছু দৈনিক লাগে ১৬৫ টাকা। |
এসবিএসটিসি-র বিভিন্ন বাস পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আসানসোল প্রভৃতি শহর থেকে কলকাতায় যাতায়াত করে। সংস্থা-সূত্রের খবর: নিবেদিতা সেতু, বিদ্যাসাগর সেতু, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে প্রভৃতি জায়গায় তাদের টোল দিতে হয়। সিএসটিসি-র কলকাতা-সাঁতরাগাছি রুটের চারটি, গাদিয়াড়া রুটের পাঁচটি এবং দিঘা রুটের ২৬টি বাসকে বিদ্যাসাগর সেতু কিংবা ধুলাগড়, অথবা দু’জায়গাতেই টোল দিতে হয়। অন্য দিকে এনবিএসটিসি-র দিঘা-উল্টোডাঙা, কলকাতা-সিউড়ি, কলকাতা-কান্দি, কলকাতা-শান্তিনিকেতন প্রভৃতি রুটের কিছু বাসকে বিদ্যাসাগর সেতুতে, কিছু বাসকে নিবেদিতা সেতুতে, কয়েকটিকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ও বর্ধমানে ঢোকার মুখে পালসিটে টোল দিতে হয়।
নতুন ব্যবস্থায় এই সব টোল আর আদায় করা হবে না। রাজ্য পরিবহণের এক অফিসার বলেন, “সরকারি বাসকে টোল ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সি ইতিমধ্যে নিগমগুলোর কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।” কিন্তু ভর্তুকির খুঁটি সরিয়ে লোকসানের ভারে ন্যূব্জ পরিবহণ সংস্থাগুলোকে রাজ্য সরকার যখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে বলেছে, তখন ঘুরপথে এই ভর্তুকির উদ্যোগ কেন?
পরিবহণ-কর্তাটি বলেন, “আমরা নতুন কিছু করছি না। পুরনো ব্যবস্থাই ফিরিয়ে আনছি। পরিবহণ সংস্থার কাছ থেকে কিছু পেতে হলে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় তো আমাদের দিতেই হবে!” |