আদর্শ থানার ‘লজ্জা’
লক-আপে ‘নির্যাতন’, প্রমাণ মিলেছে তদন্তে
‘আদর্শ থানা’র স্বীকৃতি পাওয়া হরিহরপাড়া থানার পুলিশ যে তরতিপুরের লতিফা বিবিকে থানায় আটকে রেখেই নির্যাতন চালিয়েছিল তদন্তে তা ‘স্পষ্ট’ হয়ে গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা এমনই জানিয়েছেন। তবে যৌন নির্যাতনের কোনও প্রমাণ মেলেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ ‘জোরদার’ করতেই সম্ভবত ওই অভিযোগ করা হয়েছিল। এমনই মনে করছেন জেলা পুলিশের একাংশ।
মঙ্গলবার গভীর রাতে লতিফার বাড়িতে তাঁর স্বামীকে না পেয়ে ওই মহিলাকে তুলে নিয়ে এসেছিল পুলিশ। তারপরে থানায় তারউপরে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। তবে লতিফা জানিয়েছিলেন, মারধরের পাশাপাশি তাঁকে ‘যৌন নির্যাতন’ও করা হয়। লিখিত বয়ানে পুলিশ সুপারের কাছে এ কথাই জানিয়েছে ওই মহিলা।
এর পরেই হরিহরপাড়া থানার ওসি-সহ ৬ জন পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ওই ঘটনায় তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আন্নাপ্পা ই-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, “তদন্তের রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। তবে প্রাথমিক তদন্তে ওই মহিলাকে থানায় নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও সেখানে যৌন নির্যাতনের কোনও প্রমাণ মেলেনি।”
সোমবারই বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আন্নাপ্পা ই। লতিফা বলেন, “সে দিন রাতে আমাকে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া পরে পুলিশ কেমন ব্যবহার করেছিল আমার কাছে তাই জানতে চাওয়া হয়েছিল। কত জন পুলিশকর্মী কীভাবে মারধর করেছেন, সেই সময়ে থানায় কত জন পুলিশ ছিল, জানতে চাওয়া হয় তাও। আমি ওই পুলিশ কর্তাকে পুলিশের মারের কালশিটে দাগ এবং চুল ধরে মাটিতে ফেলে কী করে ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে গিয়েছিল তাও দেখিয়েছি।”
জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে মাস খানেক আগে লতিফা বিবির স্বামী কুতুবউদ্দিন মণ্ডল ও তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে হরিহরপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তাঁর ভাসুর জহিরুল মণ্ডল। সেই সূত্রেই গত ২৯ নভেম্বর রাতে লতিফা বিবির বাড়ি গিয়েছিলেন ওই থানার কয়েক জন পুলিশ কর্মী। সেই সময়ে বাড়িতে কাউকে না পেয়ে ওই মহিলাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাঁর উপরে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ।
এর পরে স্বামী ও তাঁর এক ছেলে থানায় আত্মসমর্পণ করলে বুধবার রাতে ওই মহিলাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগে অবশ্য পুলিশ লতিফা বিবিকে হরিহরপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর পরে বাড়িতেও পৌঁছে দেয়। এ দিকে ধৃত বাবা ও ছেলেকে বৃহস্পতিবার বহরমপুর সিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তবে বিচারক তাঁদের জামিনে মুক্তি দেন। এর পরেই শুক্রবার সকালে লতিফা বিবিকে বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
সোমবার ওই মহিলার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েই হরিহরপাড়া থানার ওসি, এএসআই এবং এক কনস্টেবলকে সায়মিক ভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং কাজ থেকে ‘বসিয়ে দেওয়া হয়েছে’ ওই থানার তিন হোমগার্ডকে। তার মধ্যে এক জন মহিলা হোমগার্ডও রয়েছেন। সাময়িক ভাবে বরখাস্ত তিন পুলিশ কর্মীকেই বহরমপুর পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। এ দিন ওসি হিসেবে হরিহরপাড়া থানার দায়িত্বভার নিয়েছেন রঘুনাথগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার-ইন চার্জ অক্ষয় পাল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.