সম্পাদকীয় ২...
মানিকজোড়
ণতন্ত্র অতি মহৎ। গণতন্ত্রের পরিসরে ধর্মঘট ডাকিবার অধিকার বিলক্ষণ স্বীকৃত। সেই অধিকার প্রয়োগ করা, এক অর্থে, গণতন্ত্রেরই উদ্যাপন। সেই মহত্ত্বের সম্মুখে মাধ্যমিক পরীক্ষা আর কী? বন্ধ আর মাধ্যমিক এক দিনে পড়িলে মাধ্যমিকের দিন বদলাইতে হইবে এই নিদান দেওয়ার সময় বিমান বসু নিশ্চিত ভাবেই দুইটি ঘটনার তুল্যমূল্য বিচার করিয়া দেখিয়াছিলেন। তাঁহারা জানেন, গণতন্ত্রের ধ্বজা উচ্চে রাখিতে কিছু তুচ্ছ ক্ষতি স্বীকার করিতে হইবে বইকি। জর্জ ডব্লিউ বুশ হইলে বলিতেন, ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’। বিমান বসুর দোষ নাই এই হতভাগ্য রাজ্যে রাজনীতির সহিত দায়িত্ববোধের ভাসুর-ভাদ্রবউ সম্পর্কটি বহু পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। বরং তিনি বলিতে পারেন, প্রায় তিন মাস পূর্বে এই বন্ধের ডাক দেওয়া হইয়াছে ইহাও কি দায়িত্ববোধের পরাকাষ্ঠা নহে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিমান বসুর পরামর্শে সাড়া দেয় নাই। শিক্ষামন্ত্রী জানাইয়া দিয়াছেন, মাধ্যমিক পরীক্ষা তাহার নির্ধারিত দিনেই হইবে। সিদ্ধান্তটি, অনুমান করা চলে, মুখ্যমন্ত্রীরই। আজ বিমান বসু যে দাবি করিয়াছেন, বিরোধী পক্ষে থাকিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই দাবিই করিতেন কি না, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু, প্রশাসক হিসাবে তিনি যে সিদ্ধান্তটি করিয়াছেন, তাহা নির্ভুল। যে কোনও রাজনৈতিক হঠকারিতার সম্মুখে নতজানু হওয়া প্রশাসনের কাজ নহে। রাজ্যের যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাকে চালু রাখা, রাজ্যবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখিবার ব্যবস্থা করাই প্রশাসনের কাজ। মাধ্যমিক পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রায় এগারো লক্ষ ছাত্রছাত্রীর জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। কোনও রাজনৈতিক হঠকারিতা যাহাতে সেই এগারো লক্ষ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যতে ছাপ না ফেলিতে পারে, তাহা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব। বিমান বসুর অলীক প্রস্তাবে সম্মত না হইয়া শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসক হিসাবে তাঁহার দায়িত্বের প্রাথমিক অংশটি পালন করিয়াছেন। পরীক্ষার দিন যাহাতে এই ছাত্রছাত্রীদের জন্য যথেষ্ট যানবাহনের ব্যবস্থা থাকে, তাহাদের নিরাপত্তায় যেন কোনও বিঘ্ন না ঘটে তাহা নিশ্চিত করাও প্রশাসনেরই দায়িত্ব।
তবে, বিমান বসুর ন্যায় নেতাই হয়তো পশ্চিমবঙ্গের সমাজের প্রাপ্য। পশ্চিমবঙ্গে অরাজকতার রাজনীতিই মূল স্রোত হিসাবে স্বীকৃত। সেই স্বীকৃতি মানুষ দিয়াছে। এই রাজ্যে প্রতিটি বন্ধ জাতীয় উৎসবের মর্যাদায় পালিত হইয়াছে। বিমান বসুরা এই জনতারই নেতা। ২৮ ফেব্রুয়ারি যে এগারো লক্ষ ছেলেমেয়ে বন্ধের মধ্যেই পরীক্ষা দিতে যাইবে, অনুমান করা সম্ভব, তাহাদের অভিভাবকদের অনেকেই এত দিন বন্ধ-এর আনন্দ পূর্ণ মাত্রায় ভোগ করিয়াছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি তাঁহারা প্রথম বার বুঝিবেন, বন্ধ কেন অবশ্য পরিত্যাজ্য। পরের বন্ধটিকে সমর্থন করিবার পূর্বে তাঁহাদের অন্তত এক বার ২৮ ফেব্রুয়ারির কথা মনে পড়িবে, এই আশা করা যায় কি? রাজ্যের জনগণ কি এক বার নিজেদের প্রশ্ন করিবেন: মাধ্যমিকের তারিখ বদলাইবার পরামর্শ দেওয়ার স্পর্ধা বিমান বসুরা কোথা হইতে পান? সৎ উত্তর বলিবে, সেই স্পর্ধা সমাজই তাঁহাদের দিয়াছে। সাম্প্রতিক অতীতে সমাজ বেশ কয়েক বার সরকারের, ক্ষমতাসীন দলের ভুল ধরাইয়া দিয়াছে। দৃষ্টান্ত নন্দীগ্রাম। ভুল স্বীকারে অরাজি হইলে তাহার শাস্তিও সমাজই দিয়াছে। কই, কখনও তো দেখা যায় নাই, বন্ধ নামক অন্যায়টির প্রতিবাদে ‘সুশীল সমাজ’ এক পা-ও হাঁটিয়াছে। হাঁটিলে, বিমান বসুদের এই স্পর্ধা হইত না। এখনও সময় আছে। প্রতিবাদ না করিলে এই স্পর্ধাই শিরোধার্য করিতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.