লোকপাল জট
বিজেপির বিরোধিতাই ‘অস্ত্র’ কংগ্রেসের
খুচরো-বিতর্ক আপাতত যদি কিছুটা প্রশমিত হয়ও, লোকপাল বিল ঘিরে সংসদে ফের বিতর্ক তৈরি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির নেতৃত্বে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আগামিকাল লোকপাল বিলের রিপোর্ট চূড়ান্ত করে বিলটি ৯ ডিসেম্বর সংসদে পেশ করতে চায়। সে জন্য রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে বাড়তি দু’তিন দিন সময়ও চেয়ে নিয়েছেন সিঙ্ঘভি। কিন্তু বিলের বর্তমান চেহারা নিয়ে আপত্তি রয়েছে বাম-বিজেপি-সপা-বসপার মতো দলগুলির। ফলে চলতি অধিবেশনে বিলটি পাশ হওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় যথেষ্ট।
গত সপ্তাহে আমলাদের মধ্যে নিচু স্তরের কর্মীদের লোকপালের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে সংসদীয় কমিটি একমত হলেও কংগ্রেস রাতারাতি অবস্থান বদল করে ‘গ্রুপ সি’ কর্মীদের এর বাইরে রাখারই সিদ্ধান্ত নেয়। স্বভাবতই তার জেরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক, বিরোধীরাও সুর চড়িয়ছে। তাই এখন লোকপালে না হলেও রাজ্যের লোকায়ুক্তে ‘গ্রুপ সি’ ও ‘গ্রুপ ডি’কে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজছে না। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “অণ্ণা হজারের অনশন প্রত্যাহার করানোর সময়ে সংসদে যে তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল, তার মধ্যে দু’টিই (পদে থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত এবং নিচু স্তরের আমলাদের লোকপালের অন্তর্ভুক্ত করা) এখন শাসক দল মানতে চাইছে না।” ফলে অণ্ণা ফের আন্দোলন শুরু করলে বিজেপি তাঁকে পূর্ণ সমর্থন জানাবে বলে ওই নেতা জানিয়েছেন।
কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব জানেন, যে কোনও অবস্থাতেই অণ্ণা আন্দোলন করবেন আর বিজেপি তাতে ইন্ধন দেবে। কিন্তু কংগ্রেস মনে করছে, এ মাসের শেষে অণ্ণা যখন পুরোদমে আন্দোলন শুরু করবেন, তখন সংসদের অধিবেশন শেষ হয়ে যাবে। তার আগে সরকার বিল পেশ ও পাশের চেষ্টা করবে। কিন্তু বিজেপি-সহ বিরোধীদের আপত্তিতে যদি সেটি পাশ না হয়, সে ক্ষেত্রে দায় তাদের উপরেই ঠেলে দেওয়া হবে।
হাইকমান্ডের এই মনোভাবের সুরেই আজ সিঙ্ঘভি বলেন, “কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে খুশি করার লক্ষ্যে আমরা রিপোর্ট তৈরি করছি না। সে দায়ও আমাদের নেই। গণতন্ত্র ও আমাদের আত্মার কথা শুনে সব মানুষকে খুশি করার জন্যই এই রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।” কংগ্রেস শিবিরের যুক্তি, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক বলে যেমন তারা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করছে, তেমনই ‘গ্রুপ সি’ কর্মীরা কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক। তা ছাড়া পরিকাঠামোর দিক থেকেও লোকপালে এত বেশি সংখ্যক সরকারি কর্মচারীকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। তার জন্য প্রচুর অর্থ দরকার, আর তাঁদের উপর নজরদারির জন্য যে বিপুল সংখ্যক কর্মীকে লোকপালে নিয়োগ করতে হবে, তাঁরাও তো আসলে এই সমাজেরই অঙ্গ। তাঁরাও যে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়বেন না, তার কী নিশ্চয়তা?
তাই কংগ্রেস চাইছে রিপোর্ট পেশের পরে গোটা বিষয়টি সংসদের উপরেই ছেড়ে দিতে। আইন রূপায়িত হলে তা প্রয়োজন মাফিক সংশোধনের সুযোগও বরাবর থাকে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে কোনও বিলই ‘নিখুঁত’ হয় না। লালকৃষ্ণ আডবাণী নিজেই তো বলেছেন, লোকপাল বিল সব দুর্নীতি নিরসন করবে, এমন নয়। তাই পরিস্থিতি আঁচ করে সরকারের এক শীর্ষ নেতা বলছেন, এর পরেও যদি বিজেপি বিল পাশের ক্ষেত্রে বাদ সাধে, তা হলে অণ্ণা ও তাঁর অনুগামীরাই বুঝবেন, কাদের জন্য লোকপাল বিল পাশ হল না! দলের অন্য একটি সূত্রে অবশ্য খবর, সরকার তলায় তলায় অণ্ণাদের সঙ্গে বিরোধ কমানোর চেষ্টাও চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ না করে, সরকারের স্থিতি বিঘ্নিত না করে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের কৃতকার্যের দায় প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে না চাপিয়ে যদি কোনও পরামর্শ অণ্ণারা দেন, সরকার তা ভেবে দেখতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিছু রক্ষাকবচ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদকেও লোকপালের আওতায় কোনও ভাবে আনা যায় কিনা, তা-ও বিবেচনা করা হতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.