লোভীর থাবা রুখে গয়না ফেরালেন ট্যাক্সিচালক
ব্যাগের ভিতরে বেশ কিছু গয়নাগাঁটি রয়েছে, টের পেয়ে গিয়েছিলেন ধূর্ত যাত্রীটি। কিন্তু নিজের ট্যাক্সিতেই যে গয়না-ভর্তি ব্যাগ পড়ে আছে, চালক প্রথমে তা বুঝতেই পারেননি। ব্যাগটি নিয়ে ওই যাত্রী যখন নেমে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, সন্দেহবশত ট্যাক্সিচালকই তাঁকে বাধা দেন। শুরু হয় বচসা। তখনই জানা যায়, ব্যাগে গয়না আছে। শেষ পর্যন্ত ট্যাক্সিচালকের হাতেই ব্যাগটি দিতে বাধ্য হন ওই যাত্রী।
গয়নার ব্যাগ হারিয়ে তত ক্ষণে হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে আলিপুর থানা এলাকার বাসিন্দা সমীর ঘোষ এবং পূর্ণিমা ঘোষের বাড়িতে। সকলেই দিশাহারা। বিষয়টি যখন থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়াতে চলেছে, ঠিক তখনই ট্যাক্সিচালক জয়রামপ্রসাদ সাউ ব্যাগ নিয়ে হাজির বাড়ির দরজায়।
ট্যাক্সিচালকের সততার বৃত্তান্ত এত দিন কাগজেই পড়েছেন আলিপুরে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের বিআরএস-৮-এর বাসিন্দারা। বাড়ি খুঁজে খুঁজে গয়নার ব্যাগ-সহ ট্যাক্সিচালককে সটান হাজির হতে দেখে বাসিন্দারা অবাক হয়ে যান।
পূর্ণিমা দেবীর সঙ্গে জয়রাম। নিজস্ব চিত্র
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে পূর্ণিমাদেবী তাঁর সদ্য বিবাহিত বোন শমিতা দাসের শ্বশুরবাড়ি থেকে স্বামীর সঙ্গে ফিরছিলেন। হালতু থেকে তাঁরা ওঠেন জয়রামের ট্যাক্সিতে। পূর্ণিমাদেবীর আত্মীয়েরা জানান, শমিতাদেবী বিয়েতে পাওয়া প্রায় দেড় লক্ষ টাকার গয়না তাঁর দিদি পূর্ণিমাদেবীকে আলিপুরের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। তাই অন্যান্য জিনিসপত্রের ব্যাগের সঙ্গে গয়নার ব্যাগটিও ট্যাক্সিতে তোলা হয়েছিল। কিন্তু নামার সময় গয়নার ব্যাগটি ট্যাক্সি থেকে নিতে ভুলে যান তাঁরা। চালকও ট্যাক্সি ঘুরিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যান।
পূর্ণিমাদেবীর প্রতিবেশী সত্যজিৎ কোটাল জানান, আলিপুর থানা তো বটেই, লালবাজারেও ফোন করা হয়েছিল। অত টাকার গয়না খুইয়ে বাড়ির সকলেই তখন দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। পূর্ণিমাদেবীরাও ট্যাক্সির নম্বর ঠিকঠাক বলতে পারছিলেন না। গয়না ফিরে পাওয়ার আশা নেই দেখে সকলেই যখন খুব ভেঙে পড়েছেন, তখনই সাক্ষাৎ মুশকিল-আসানের মতো হাজির ট্যাক্সিচালক জয়রাম। তাঁর হাতে গয়নার সেই ব্যাগ। সত্যজিৎবাবু বলেন, “আমরা খবরের কাগজে এমন খবর অনেক পড়েছি। এই প্রথম নিজের চোখে দেখলাম।”
গয়না ফিরিয়ে দেওয়াটা যে খুব সহজে হয়নি, রাতে পূর্ণিমাদেবীদের সঙ্গে আলিপুর থানায় গিয়ে তা জানান হাইড রোডের বাসিন্দা জয়রাম। পরে তিনি বলেন, “মালপত্র এবং যাত্রীদের নামিয়েই ট্যাক্সি ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম। একটা ব্যাগ যে রয়ে গিয়েছে, খেয়াল করিনি। ফেরার পথে অন্য এক যাত্রীকে তুলেছিলাম তারাতলায়। তাঁর সঙ্গে স্যুটকেস ছাড়া আর কিছু ছিল না। কিন্তু নামার সময় ডিকি থেকে তিনি স্যুটকেসের সঙ্গে আরও একটি ব্যাগ বার করতেই আমার সন্দেহ হয়। বুঝতে পারি, ব্যাগটি আগের যাত্রীরা ফেলে গিয়েছেন। অথচ দ্বিতীয় দফার যাত্রীটি ওই ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে বাধা দিই। তাঁর সঙ্গে আমার ঝামেলাও হয়।” জয়রাম তখনও বুঝতে পারেননি যে, ব্যাগে গয়না আছে। দ্বিতীয় দফার যাত্রী ব্যাগ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে তিনি গয়নার খোঁজ পান। এবং সঙ্গে সঙ্গেই ফেরত দিতে ছোটেন। গয়না ফিরে পেয়ে পূর্ণিমাদেবী-সমীরবাবুরা আপ্লুত। থানার বাইরে ট্যাক্সিচালক জয়রামকে ধন্যবাদ দেওয়ার সময় কেঁদে ফেলেন পূর্ণিমাদেবী। বলেন, “আমার ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা নেই।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.