স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সম্পাদকের মধ্যে কাজিয়ায় সরকারি অনুদানের টাকা পাচ্ছে না স্কুলের কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী। কুলটির মিঠানি উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ অবভাবকেরা। তাঁরা শীঘ্র টাকা দিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সম্পাদককে আলাদা ভাবে চিঠি পাঠিয়েছেন। জেলা স্কুল পরিদর্শক জানান, এ ব্যাপারে তিনি সবিস্তার খোঁজ নেবেন।
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্কুলে ৬০১ জন ছাত্র-ছাত্রীর পোশাক তৈরির জন্য অগস্টে সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে দু’লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা এসেছে। প্রত্যেক পড়ুয়াকে চারশো টাকা করে দেওয়ার কথা। কিন্তু পাঁচ মাস কেটে গেলেও ছাত্র-ছাত্রীরা ওই টাকা এখনও হাতে পায়নি। এই খবর জানাজানি হতেই অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। টাকা না দেওয়ার কারণ জানতে তাঁরা প্রধান শিক্ষকের কাছে দরবার করেন। কিন্তু সদুত্তর না পেয়ে আসানসোলের মহকুমাশাসক, জেলা স্কুল পরিদর্শককে বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা।
স্কুলে এ ব্যাপারে খোঁজখবর করতে গেলে প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন পাল স্বীকার করেন, অগস্টে টাকা এসেছে। কিন্তু কোনও ছাত্র-ছাত্রীকে সেই টাকা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “আমি একার এই টাকা দেওয়ার এক্তিয়ার নেই। পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে সব সদস্যকে জানিয়ে সেই টাকা দিতে হবে। কিন্তু পরিচালন সমিতির সম্পাদক বৈঠক ডাকছেন না। তাই আলোচনা হয়নি। টাকাও দেওয়া যায়নি।” টাকা এসে পড়ে থাকার বিষয়টি তিনি পরিচালন সমিতির সম্পাদককে জানিয়েছেন কি না, এই প্রশ্নে প্রধান শিক্ষকের জবাব, “আমি কেন জানাব? প্রতি দু’মাসে সম্পাদকের এক বার করে সভা ডাকার কথা। কিন্তু এপ্রিলের পরে তিনি আর সভা ডাকেননি।” ফলে অনুদানের টাকাও পড়ুয়াদের দেওয়া যায়নি বলে তাঁর দাবি।
পরিচালন সমিতির সম্পাদক নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য পাল্টা দাবি, “এ রকম কোনও অনুদান এসেছে বা তার জন্য বৈঠক ডাকতে হবে, তা আমি জানিই না। প্রধান শিক্ষক এ সব কিছু আমাকে জানাননি।” নিয়মমাফিক পরিচালন সমিতির বৈঠক না ডাকা প্রসঙ্গে নন্দদুলালবাবুর অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেন না। তাই সভা ডাকা বন্ধ করেছি।” যদিও তাঁর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবনবাবু।
পড়ুয়াদের জন্য আসা সরকারি টাকা আটকে থাকার ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন আসানসোলের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত। তিনি বলেন, “এই ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। স্কুলের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত হবে কেন?” এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্ধমান জেলা স্কুল পরিদর্শক আব্দুল হাই বলেন, “ওই টাকা তো অনেক আগেই দিয়ে দেওয়ার কথা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা বিতরণ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বহুদিন ধরেই মতভেদ চলছে। আর তার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পড়ুয়ারা। |