স্বপ্নায়ু কলকাতাতেই
শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি, পাল্টা নালিশ শিক্ষিকার
ভুল বোঝাবুঝির সূচনা বাংলা রচনার একটি পঙ্ক্তি নিয়ে যে, তার জেরে এখনও ক্লাস কামাই করে কলকাতায় আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছে দুর্গাপুরের স্কুলছাত্র স্বপ্নায়ু বাসুরি। স্কুলের বাংলা শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শুধু পুলিশে অভিযোগ নয়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছেও চিঠি দিয়েছেন তার বাবা-মা। গ্রেফতারির সম্ভাবনা এড়াতে শিক্ষিকা ইতিমধ্যেই আগাম জামিন নিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, ‘মিথ্যা রটনা’র ফলে তাঁর কেজি-তে পড়া ছেলেকেও অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত জুলাইয়ে, পুজোর ছুটির পরেই। বিধাননগরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র স্বপ্নায়ু বাংলা রচনায় ‘মুক্তি’ খোঁজার কথা লিখেছিল। তা পড়ে বাংলা শিক্ষিকা সুমিতা সাহা ক্লাসে বলেন, এই প্রয়োগের অর্থ হতে পারে আত্মহত্যা করতে চাওয়া। এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা করা উচিত নয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে তা তিনি জানিয়েওছিলেন। কিন্তু শিক্ষিকার মন্তব্যে স্বপ্নায়ুর কিছু সহপাঠী সম্ভবত মজা পেয়ে যায় এবং আত্মহত্যার কথা তুলে তাকে খেপাতে থাকে বলে অভিযোগ। এমনকী এক ছাত্র তার হাতে একটি দড়িও দিয়েছিল স্বপ্নায়ুর বাবা-মা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠিতে লিখেছেন।
এই নিয়ে ছাত্রটির পরিবার স্কুলে অভিযোগ জানালে প্রধান শিক্ষক ফাদার এমএস আরোকিয়াস্যামি দু’পক্ষকে মুখোমুখি বসিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করেন। সুমিতাদেবীর কারণে স্বপ্নায়ু ভয়ে ভুগছে বলে তার অভিভাবকেরা জানানোয় তার সেকশনও পাল্টে দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরে গায়ের ঝাল মেটাতে সুমিতাদেবী একাধিক বার স্বপ্নায়ুকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। শিক্ষিকা অবশ্য দাবি করেন, “অতিরিক্ত কথা বলার জন্য এক দিন শুধু ছেলেটির গাল টিপে দিয়েছিলাম। বলা হচ্ছে, সিঁড়িতে নিয়ে গিয়ে আটকে মারধর করা হয়েছে। স্কুলের সবার সামনে সেটা কি আদৌ সম্ভব?”
গত ২ ও ২৩ নভেম্বর স্বপ্নায়ু স্কুলেই অজ্ঞান হয়ে যায়। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পরে স্নায়ু চিকিৎসক দেখাতে কলকাতায় নিয়ে যান তার বাবা-মা। চিকিৎসকেরা জানান, মানসিক ভীতির কারণে এ রকম হতে পারে। ২৪ নভেম্বর কলকাতাতেও ফের অজ্ঞান হয়ে যায় স্বপ্নায়ু। তার বাবা, দুর্গাপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মী সুকান্ত বাসুরি ২৭ নভেম্বর দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানায় শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ছাত্রকে আটকে নির্যাতন এবং তাঁর স্বামী দেবাশিস সাহার বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন।
সুকান্তবাবু ও তাঁর স্ত্রী অভিরূপা বাসুরির অভিযোগ, দুর্গাপুর থেকে কলকাতায় যাওয়ার পথে দু’টি লোক সারাক্ষণ মোটরবাইকে তাঁদের ধাওয়া করেছে। স্বপ্নায়ু তাদের চেনে। স্কুলে গণ্ডগোল শুরু হওয়ার পরে ওই দু’জন তাকে বারবার ভয় দেখাত বলেও সে জানিয়েছে। শক্তিগড় ও এসপ্ল্যানেডে তাঁরা নিজেরাও ওই দু’জনকে দেখেছেন। কলকাতাতেও বাইকে চেপে দুই আরোহী একাধিক বার স্বপ্নায়ুর কাছাকাছি এসেছে। কিন্তু বাড়ির লোক ধাওয়া করলে তারা পালায়। ২৯ নভেম্বর কলকাতার গড়িয়াহাট থানায় লিখিত ভাবে তাঁরা এই বৃত্তান্ত জানান। ১ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠিতেও তা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি। দফতরের এক আধিকারিকের কাছে তাঁরা চিঠি দিয়ে এসেছেন।
সুমিতাদেবী অবশ্য দাবি করেছেন, স্বপ্নায়ুর বাবা-মা এক সময়ে তাঁর কাছেই নালিশ করেছিলেন যে তাঁদের ছেলে ভুরি ভুরি মিথ্যে কথা বলে। মামলা রুজু হওয়ায় ৩০ নভেম্বরই তিনি দুর্গাপুর আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন। এর পরে ২ ডিসেম্বর শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামী নিউ টাউনশিপ থানায় লিখিত ভাবে জানান, তাঁদের হেয় করতেই সুকান্তবাবু ও তাঁ স্ত্রী মিথ্যে গল্প ফাঁদছেন বলে তাঁদের আশঙ্কা। এমনকী ছেলেটিকে স্কুল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অজুহাত হিসেবে তাঁদের উপরে আরও দোষ চাপানো হতে পারে।
স্বপ্নায়ুর ‘শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি’র দায়ও নিতে চাননি সুমিতাদেবী। তাঁর দাবি, যা-ই ঘটে থাক, ১২ বছরের ওই ছাত্রের প্রতি তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ নন। বরং ষান্মাসিক পরীক্ষার উত্তরপত্রে স্বপ্নায়ু একটি ভাল চিঠি লেখায় তা তিনি নিজের সেকশনে সব ছাত্রের সামনে পড়ে শুনিয়েছেন। স্বপ্নায়ু ভাল নম্বরও পেয়েছে। কিন্তু তিনি এই টানাপোড়েনে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাঁর ছ’বছরের ছেলে ওই স্কুলেই কেজি-তে পড়ে। তার উপরেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাঁর স্বামীর বক্তব্য, “আমরা চাই, বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে উঠুক। কিন্তু ওর অভিভাবকেরা ঘৃণ্য কাজ করছেন।”
সুকান্তবাবু এ দিনও জানিয়েছেন, ক্লাস করতে না পারায় স্বপ্নায়ুর পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসার কারণেই তাকে আরও কিছু দিন কলকাতায় থাকতে হবে। প্রধান শিক্ষক ফাদার আরোকিয়াস্যামি অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, এর আগে ভাল ফল ও উপস্থিতি থাকায় ক্লাস করতে না পারলেও স্বপ্নায়ুকে আটকানো হবে না। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েই যেন সে স্কুলে ফেরে। তার সঙ্গে কথা বলেই তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.