শোনপুর বাজারি
রাস্তা ফাটিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি হেলিয়ে দিল ধস
ফের ধস খনি অঞ্চলে।
ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হল পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারি প্রকল্প এলাকার রাস্তা। এর জেরে বিপর্যস্ত রাস্তার দু’পাশে থাকা ১৭টি বিদ্যুতের খুঁটি। কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে ভূগর্ভে। মঙ্গলবার সকালের এই ঘটনায় অবশ্য কেউ হতাহত হননি। তবে রাস্তার দু’দিকে লাল ফিতের বেড়া দিয়ে সতর্কতা জারি করেছে ইসিএল।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, শোনপুর বাজারি প্রকল্পের খোলামুখ খনি থেকে কয়লা কাটার আগে পাথর ও মাটি তুলে জমা করে রাখা হয়েছিল অনেক দিন আগে। এর পরে বাজারি প্রকল্পে ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে পাশেই আর একটি প্যাচ চালু হয়। তার জন্য কাটা পাথর-মাটিও ফেলা শুরু হয় আগে থেকে জমে থাকা ওই সব পদার্থের উপরেই। ঠিক ওই এলাকাতেই হরিপুর ১ নম্বর ইনক্লাইনের ডোবরানা কয়লা স্তরে কাজ চলছে। এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎ জমে থাকা ওই সব পাথর-মাটি বসতে শুরু করে। এর জেরে পরিবহণ রাস্তার তিনশো মিটার এলাকা জুড়ে ফাটল দেখা দেয়। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০টি ফাটল দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাস্তার পাশের ১৭টি বিদ্যুতের খুঁটি।
ধরণী দ্বিধা হও...। মঙ্গলবার দুপুরে ছবিটি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।
হরিপুর ইনক্লাইনের খনিকর্মী সজল চট্টোপাধ্যায় জানান, এ দিন ভূগর্ভের ৫৭ নম্বর ‘ডিপ লেভেল’-এ তাঁরা প্রায় দেড়শো জন কাজ করছিলেন। হঠাৎ হাওয়া ঢোকার শব্দ শুনতে পান তাঁরা। তার পরেই আলো নিভে গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। তড়িঘড়ি তাঁরা সকলে উপরে উঠে আসেন। রাস্তায় ফাটলের খবর পেয়েই হরিপুর কোলিয়ারির এজেন্ট ও নিরাপত্তা আধিকারিক ভূগর্ভে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন।
চলতি বছরের জুলাইয়ে অন্ডালের পরাশকোলে ছাই দিয়ে ভরাট করা ধস এলাকা বসে গিয়ে মৃত্যু হয় সন্তান-সহ দুই বাবার। ইসিএল নিয়ম মেনে ধস ভরাট না করার জন্যই এ ভাবে চার জনের মৃত্যু হল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মাসখানেক আগেই কুলটির সাঁকতোড়িয়া কলোনি এলাকায় খানিকটা জমি বসে যায়। ফাটল দেখা দেয় বেশ কিছু বাড়িতেও। এ দিন পাণ্ডবেশ্বরের ঘটনাতেও ইসিএল কর্তৃপক্ষের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। সিটু নেতা দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রথমে শোনপুর বাজারির খোলামুখ খনির মাটি-পাথর মজুত করা হয়েছিল। এর পরে বেসরকারি সংস্থাও তার উপরে মাটি-পাথর জমা করায় অতিরিক্ত ভার হয়ে যায়। দিলীপবাবুর অভিযোগ, “২২ অগস্ট আমরা ইসিএলের শোনপুর বাজারি কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সদর দফতরেও লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম, এ ভাবে জমা পদার্থের উপরে ফের মাটি-পাথর ফেলা ঠিক হচ্ছে না। এর ফলে পরিবহণের রাস্তা থেকে ভূগর্ভ, সবই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।” এই ঘটনার জন্য ইসিএলের গাফিলতিই দায়ী বলে দাবি করেছেন আইএনটিইউসি নেতা ভক্তিপদ চক্রবর্তী, আইএনটিটিইউসি নেতা এস এন বাগচিরাও। ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল মাইন্স অফিসিয়াল সুপারভাইজার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দা এরিয়া সম্পাদক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অতিরিক্ত পাথর-মাটি ফেলা হলে তা সর্বোচ্চ ৩০ মিটার উচ্চতা ও ২২ ডিগ্রি ঢালের বেশি হওয়া উচিত নয়। তার বেশি জমা করা হলেই ফাটলের সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে জমা পাথর ও মাটি ওই সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল বলেই জানিয়েছেন অমিতাভবাবু।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে প্রকল্পের পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত রাস্তাটি। জায়গায় জায়গায় ফাটল। প্রকল্প এলাকার এই রাস্তাটি ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে যুক্ত হয়েছে। ওই সড়কের পঞ্চাশ মিটার দূরত্বের মধ্যেও ফাটল রয়েছে শোনপুর বাজারির রাস্তাটিতে। ভিড় জমিয়েছেন আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। ইসিএল কর্তৃপক্ষের তরফে রাস্তার দু’দিকে লাল ফিতের বেড়া বেঁধে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় মেনে নেন, মাটি-পাথরের উপরে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় তা বসে গিয়েছে। তার জেরেই বিপত্তি ঘটেছে। বিদ্যুতের খুঁটি বিপর্যস্ত হওয়ায় ভূগর্ভে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়েছে। আপাতত উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনও ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.