হুকিং-বিরোধী অভিযানকে ঘিরে মগরাহাটে গোলমালের জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দিকে আঙুল তুললেন মগরাহাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের খয়রুল হক লস্কর। তাঁর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ওই গোলমালের পিছনে সিপিএমের ‘উস্কানি’ও ছিল।
যদিও এই খয়রুল হকের বিরুদ্ধে শুক্রবার তৃণমূলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন নৈনান ও মল্লিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রচারের সময় তৃণমূল নেতা খয়রুল হক এবং নেত্রী মহারানি পাল (বর্তমানে নৈনান পঞ্চায়েতের প্রধান) গ্রামে বিদ্যুদয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রাখেননি। তা ছাড়া, বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা যখন লাইন কাটতে এসেছিলেন, তখন কথা বলার জন্য দুই নেতা-নেত্রীকে বহু বার ফোন করা হয়। কিন্তু তাঁরা আসেননি। শুক্রবার ওই গ্রামে খয়রুলের বিরুদ্ধে ‘পুলিশকে উস্কানি দিয়ে গুলি চালনায় প্ররোচিত করা’র অভিযোগ সমন্বিত পোস্টারও দেখা গিয়েছিল। |
বন্ধেও খোলাই রয়েছে দোকানপাট। শনিবার মগরাহাট-২ ব্লকের কলস বাজারে। নিজস্ব চিত্র। |
খয়রুল শনিবার ফোনে দাবি করেন, “বৃহস্পতিবার যে অবৈধ সংযোগ কাটা হবে, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা তা আমাকে জানায়নি। সে কারণেই গোলমাল হয়। তা ছাড়া, নৈনান এবং পাশের মল্লিকপাড়া গ্রামে বহু সিপিএম সমর্থক রয়েছে। তারাই গোলমালে উস্কানি দিয়েছে।” গ্রামবাসীরা তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন, সে ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, “আমি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মগরাহাট শাখায় গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বহু তদ্বির করেছি। কিন্তু এখনও কেন সংযোগ দেওয়া হল না, তা ওই সংস্থাই বলতে পারবে।” নৈনান পঞ্চায়েতের প্রধানের সঙ্গে এ দিনও যোগাযোগ করা যায়নি।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, হুকিং-বিরোধী অভিযান কাউকে না জানিয়ে করাটাই তাদের দস্তুর। মগরাহাটে অভিযান চালানোর দিন দু’য়েক আগেই নৈনান অঞ্চলে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধের জন্য মাইকে প্রচার করা হয়। তার পরেই বৃহস্পতিবার অভিযান চালানো হয় বলে এক বিদ্যুৎ-কর্তা জানান।
খয়রুল হকের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএমও। দলের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই তৃণমূল উন্নয়নের ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন মানুষ সব বুঝতে পারছেন। তাঁরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। ওরা সিপিএমের ঘাড়ে মিথ্যা দোষ চাপাচ্ছে।”
পুলিশের গুলি চালনা এবং নৈনান গ্রামে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ১২ ঘণ্টার মগরাহাট-২ ব্লকে বন্ধ ডেকেছিল বামফ্রন্ট। বন্ধে তেমন সাড়া পড়েনি। অনেক দোকান খোলা ছিল। যানবাহনও চলেছে। সকালে নৈনান গ্রামের রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধের চেষ্টা করেন কয়েকজন গ্রামবাসী। কিছু ক্ষণের মধ্যে অন্য গ্রামবাসীরা তা সরিয়ে দেন। নিহত রেজিনা খাতুন এবং সায়েরা বিবির পরিবারের লোকজনকে সমবেদনা জানিয়ে আসেন জয়নগরের এসইউসি সাংসদ তরুণ মণ্ডল। জেলার বিজেপি নেতৃত্ব এবং কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরাও নৈনানে যান। |