ক্রিকেট বল তুলতে গিয়ে পুকুরের জলে তলিয়ে যাচ্ছিল এক কিশোর। সাঁতার জানতো না। তাঁকে বাঁচাতে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতারে পটু এক বন্ধু। কিন্তু, ডুবন্ত কিশোর এমন ভাবে জাপটে ধরে বন্ধুকে, যে সাঁতার জানা সত্ত্বেও তলিয়ে যায় সে-ও । কোনও ভাবেই বন্ধুর বাহুপাশ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে ভেসে উঠতে পারেনি।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার দক্ষিণ বাকসাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুই কিশোরের নাম অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায় (১৫) এবং তমাল মিদ্যে (১৯)। অর্ণব-ই প্রথম তলিয়ে গিয়েছিল। তার শক্তপোক্ত চেহারা। তমাল সাঁতার জানত এবং অর্ণবকে বাঁচাতে সে-ই ঝাঁপিয়েছিল জলে। দু’জনেই দক্ষিণ বাকসাড়ার বাসিন্দা। |
সামনের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল অর্ণবের। পড়ত বাকসাড়া হাইস্কুলে। তমাল বি কম পার্ট ওয়ানের ছাত্র। পড়ত নরসিংহ দত্ত কলেজে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকালে বন্ধুদের সঙ্গে স্থানীয় কনক কাননের মাঠে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল অর্ণব, তমালরা। মাঠের পাশেই বড় পুকুর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি দিনই ক্রিকেট বল পুকুরে পড়ে যেত। এ জন্য পুকুরের পাশে লম্বা লাঠি রাখা থাকতো। তার সাহায্যে ভাসমান বল পাড়ের দিকে টেনে আনা হতো। এক জন পাড় থেকে নেমে বল কুড়িয়ে নিত। এ দিনও ছেলেরা সেই চেষ্টাই করেছিল। কিন্তু, বলটা এ দিন একটু দূরেই পড়েছিল। লাঠির নাগালের বাইরে থাকায় তাকে টেনে পাড়ের কাছে আনা যায়নি। জলে নেমে বল কুড়োতে যায় অর্ণব। তখনই ডুবে যায় সে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে ডুবে যায় তমালও। এক ঘণ্টা পরে অচৈতন্য দুই কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। |
এই পুকুরেই ডুবে যায় দুই বন্ধু। |
তমালদের সঙ্গে এ দিন ক্রিকেট খেলছিল একাদশ শ্রেণির বিশাল পারাল। বিশাল বলে, “অর্ণবকে ডুবে যেতে দেখে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তমাল ও জিৎ। তমাল সাঁতারে পটু। ও সাঁতরে গিয়ে অর্ণবের কাছে যেতেই অর্ণব তমালকে জড়িয়ে ধরে। এর পর ওরা দু’জনেই ডুবে যেতে থাকে। জিৎ ওদের দু’জনকে পাড়ের দিকে টেনে আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি।” অর্ণবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ওর দাদু জ্ঞানেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে রয়েছেন এলাকার মানুষ। তিনি সমানে কেঁদে চলেছেন। দোতলা বাড়ির ভিতর থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে এক মহিলার কান্নার শব্দ। অর্ণবের মা। জ্ঞানেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “বারবার বলেছিলাম সাঁতার শিখতে। শিখলে আজ এই দিন দেখতে হত না।”
তমালের বাড়ির বাইরে এলাকার মানুষের জটলা। বাড়ির সামনে চেয়ারে চুপ করে বসেছিলেন তমালের বাবা রতন মিদ্যা। মৃত্যুর খবর তখনও জানানো হয়নি তাঁকে। শুধু শুনেছেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তমাল হাসপাতালে রয়েছে। অসহায় ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, “ছেলেটা ফিরবে তো?” |