মগরাহাটের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মগরাহাটে পুলিশের গুলিচালনার ঘটনা ‘লজ্জাজনক’ বলে আগেই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও পুলিশের গুলিচালনার নিন্দা করেন। মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে জানান, মগরাহাটের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি প্রবীর সামন্তের নেতৃত্বে। পাশাপাশি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা মেনে সিআইডি-ও ঘটনার সামগ্রিক তদন্ত করবে।
মগরাহাট-সহ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মহাকরণে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। শনিবার সেই বৈঠকের পরেই মগরাহাটের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ জারি করেন তিনি।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই বৈঠকে ডাক পাননি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম।
মগরাহাটে গুলিচালনার খবর রাজ্য প্রশাসন কখন জানতে পেরেছিল, তাই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতভেদ দেখা দিয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিবের। বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত মহাকরণে থেকেও মগরাহাটে গুলিচালনার খবর পাননি বলে
|
নিজস্ব চিত্র |
জানিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু শুক্রবার স্বরাষ্ট্রসচিব দাবি করেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা পুলিশের গুলি চালানোর খবর পেয়েছিলেন। এই খবর তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন কি না, তার সরাসরি উত্তর এড়িয়েও সম্মতিসূচক ইঙ্গিত করেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
তার পরই এ দিন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। মহাকরণে নিজের ঘরে থাকা সত্ত্বেও ডাক পাননি স্বরাষ্ট্রসচিব। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি মগরাহাট নিয়ে মতভেদের কারণেই স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতি অনাস্থা দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী? সরকারের এক মুখপাত্র জানান, মুখ্যমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বা সেই সংক্রান্ত কোনও বৈঠক ডাকলে তাতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে ডাকতেই হবে এমন কোনও নিয়ম নেই। কিন্তু যে বৈঠকে মুখ্যসচিব রয়েছেন, ডাক পেয়েছেন ডিজি-এডিজি-র মতো পুলিশ অফিসারেরা, সেখানে স্বরাষ্ট্রসচিবের থাকাটা অনেকটাই বাধ্যতামূলক বলে মনে করা হয়।
মগরাহাটের ঘটনার পিছনে কারা ছিল, কেন গুলি চলে, যথাযথ কারণে গুলি চালানো হয়েছিল কিনা, বিচারবিভাগীয় তদন্তেই তা প্রকাশ পাবে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। নিজেদের শাসনকালের কোনও ঘটনায় এই প্রথম বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিল তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকার। সাঁইবাড়ি বা কাশীপুর ‘গণহত্যা’র মতো যে সব ঘটনায় এই সরকার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, সেগুলি সবই অতীতের। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “আমরা চাই, সত্য ঘটনা প্রকাশ হোক। সরকারের হারানোর বা লুকোনোর কিছু নেই। যা মিথ্যা, তাকে আমরা মিথ্যা বলব। যা সত্যি, তাকে সত্যি বলব। এই মনোবল এবং স্বচ্ছতা আমাদের রয়েছে।”
সিপিএম অবশ্য বৃহস্পতিবারই মগরাহাটে পুলিশের গুলিচালনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছিল। এ দিন মমতার ঘোষণার পরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রতিক্রিয়া, “চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ভালই করেছেন। তবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে না দিয়ে এক জন কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করালে ভাল হত।” ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষও দাবি করেন, “কর্মরত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে মগরাহাট-কাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্ত করাতে হবে এবং নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
মগরাহাটের ঘটনা নিয়ে আজ, রবিবার সকালে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বামফ্রন্টের।
মগরাহাটে নিহতদের পরিবারকে এ দিন দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ওখানে আমার দু’টি বোন মারা গিয়েছে। আমি লজ্জিত, দুঃখিত। ওদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। গুরুতর আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহনের কথাও সরকার বিবেচনা করবে।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী সভাগৃহে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও মমতার বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক। মুখ্যমন্ত্রী এর নিন্দা করেছেন। আমিও পুলিশকর্মীই ছিলাম। আমার মনে হয়, সে দিন পুলিশের আরও সংযত থাকা উচিত ছিল।”
এ দিনই মগরাহাটে তদন্তে যায় সিআইডি-র একটি দল। সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশন) কে জয়রামন জানান, গুলি চালানোর ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি পুলিশকে মারধর, তাদের লক্ষ করে ইট-পাথর ছোড়া, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়া এবং তাঁদের মারধর করার ঘটনারও তদন্ত হবে। পাশাপাশি, পুলিশের গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি সত্যিই তৈরি হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
কিন্তু যে বেআইনি হুকিংকে ঘিরে এত ‘কাণ্ড’, তা রোখার ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন? মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, “এখন নয়। ওটা পরে হবে।” |