আমার মা মারা যাওয়ার পর এ দেশ থেকে যে রকম সমবেদনা পেলাম, তার জন্য আমার ভারতীয় পাঠকদের ব্যক্তিগত ভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা ভিয়া ফিওরিতোয় খুব গরিব পরিবারে বড় হয়েছিলাম। আমাকে এবং আমার ভাইদের প্রচুর ভালবাসা, করুণা আর শাসনের মধ্যে বড় করেছিলেন মা। সারা জীবন আমি যা-ই করেছি, তা সে খারাপ হোক বা ভাল, মা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। ঠিক এক জন ভাল কোচের মতো মা জানতেন, কখন সমর্থন করতে হয় আর কখন শাসন করা জরুরি। সব সময় ইতিবাচক এবং সৎ পরামর্শ দিতেন।
অভিভাবক হওয়া আর ফুটবল কোচিংয়ের মধ্যে অনেক মিল আছে। কোচ হিসেবে এখন আমি ফুটবলারদের উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করি। ওদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। যাতে প্রতি দিন ওরা নিজেদের আরও ভাল ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। ঈশ্বর জানেন, ফুটবলার হিসেবে আমার কোচেদের কত সমস্যায় ফেলেছি আমি। কিন্তু কখনও তাঁদের অসম্মান করিনি। |
অ্যালবাম থেকে: মা ডালমার সঙ্গে মারাদোনা। |
এমন কিছু লোক আছেন যাঁরা কোচ হিসেবে খুব ভাল কিন্তু মানুষ হিসেবে নয়। আবার এমন কয়েক জন রয়েছেন যাঁরা ভাল কোচ এবং মানুষ হিসেবেও অসাধারণ। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আগে কার্লোস বিলার্দো আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলেছিলেন আর্জেন্তিনার নেতৃত্ব দিতে। অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটাও আমাকে দিয়েছিলেন। ১৯৮২ সালে আমাদের হারের জন্য অনেকেই আমাকে দোষ দিয়েছিল। কিন্তু বিলার্দো আমাকে এই বড় দায়িত্বটা দিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতেন এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমার আছে। আর ঠিক সেটাই করেছিলাম আমি। মেক্সিকোয় ১৯৮৬ বিশ্বকাপ আমরা জিতেছিলাম। ১৯৯০-তেও ফাইনালে উঠেছিলাম।
বিশ্বের সেরা কোচেদের কথা ভাবুন। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে অ্যালেক্স ফার্গুসন, রিয়াল মাদ্রিদে হোসে মোরিনহো, বার্সেলোনায় পেপ গুয়ার্দিওলাএঁরা সবাই কড়া অনুশাসক হলেও ফুটবলারদের প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠ। ফুটবলারদের উপর খুব বড় দায়িত্ব দেন। প্রচারমাধ্যমের সমালোচনার মোকাবিলাও করেন ফার্গুসনরা। এঁরা কেউ ব্যক্তিগত খ্যাতি নিয়ে মাথা ঘামান না, শুধু জিততে চান। ইউরোপীয় ফুটবলে নতুন প্রজন্মের কোচেদের আমার খুব উত্তেজক লাগে। গুয়ার্দিওলার মতো নম্র কোচের পাশাপাশি মোরিনহোর মতো মানুষও আছেন সেখানে। নাপোলির ওয়াল্টার মাজারি খুব ভাল দল তৈরি করছেন। জার্মান কোচ জোয়াকিম লো-র কাছে মনে হয় এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা জাতীয় দল রয়েছে। কর্তব্যনিষ্ঠা, খেলার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং কঠোর পরিশ্রমের পুরনো ধ্যানধারণাগুলো ধরে রেখেই এই প্রগতিশীল কোচেরা ফুটবলে নতুন ভাবনা, নতুন অনুপ্রেরণা নিয়ে এসেছেন। |