মাওবাদীদের হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন সাংসদ ইন্দর সিংহ নামধারী। কিন্তু ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে গাড়ি উড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ পুলিশের। ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের লাতেহার ও পলামু জেলার সীমানায়, মহুয়াটাঁড়ে।
রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র রাজকুমার মল্লিক বিকালেই জানিয়েছিলেন, এসকর্ট ভ্যানে থাকা ৮ জন পুলিশের প্রত্যেকেই বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা বলেন, “৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। রাতে যে গুলির লড়াই চলছে তাতে আরও কয়েক জন গ্রামবাসীর মৃত্যুর আশঙ্কাও করা হচ্ছে। নিরাপত্তার কোনও ঘাটতি ছিল কি না দেখতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন রাতে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের তুমুল গুলির লড়াই শুরু হয়। বেসরকারি সূত্রের খবর, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কয়েক জন মহিলা সহ বেশ কিছু গ্রামবাসী। লাতেহার ও ডালটনগঞ্জ থেকে বিরাট যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। |
সাংসদ ইন্দর সিংহ নামধারী। ছবি: সৈকত চট্টোপাধ্যায় |
লাতেহারের গারুতে কলেজের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন স্পিকার তথা চাতরার বর্তমান সাংসদ নামধারী। প্রায় দু’মাস আগে থেকেই তাঁর কর্মসূচিটি চূড়ান্ত ছিল। অনুষ্ঠান শেষে গারু থানার পুলিশ তাঁকে এসকর্ট করে ডালটনগঞ্জে নিয়ে আসছিল। মহুয়াটাঁড়ের কাছে বিস্ফোরণ ঘটে। ডালটনগঞ্জে বাড়িতে বসে নামধারী বলেন, “এসকর্ট গাড়িটি খুব ঢিমেতালে চলছিল, ড্রাইভারকে বলি, আরো জোরে চালাও। এসকর্ট পিছনে থাক।” নামধারীর গাড়ি এসকর্ট গাড়িকে পেরনোর মিনিট খানেকের মধ্যেই বিস্ফোরণটি ঘটে। প্রথম গাড়ি হিসেবে, নামধারীর গাড়িটি বেরিয়ে গেলেও পিছনে থাকা এসকর্ট গাড়িটি বিস্ফোরণ এড়াতে পারেনি। নামধারী বলেন, “পিছনে বিকট শব্দ হতে গাড়ি থামাতে বলি ড্রাইভারকে। ও বলে, পিছনে বিস্ফোরণ হয়েছে। দাঁড়াব না। গাড়ি ডালটনগঞ্জে এসে থামে।”
রাজ্য পুলিশের কর্তারা রাতে জানান, বিস্ফোরণে পুলিশের গাড়িটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়। আশপাশের জঙ্গল থেকে গুলি ছুটে আসতে থাকে। নামধারীর কনভয়ে পুলিশের আরও একটি গাড়ি ছিল। এর পরই লাতেহার জঙ্গলে শুরু হয় গুলির লড়াই। গারু থেকে আরও বাহিনী পৌঁছয়। পলামু, লাতেহার থেকে যৌথবাহিনীও সামিল হয়। মাওবাদীদের বড় বাহিনী ওখানে রয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ‘বরাত জোরে’ রক্ষা পেয়েছেন সাংসদ তথা রাজ্যের প্রথম স্পিকার নামধারী। এক সময় বিজেপিতে ছিলেন পরে দল থেকে বহিস্কৃত হন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নির্দল হিসেবেই তিনি চাতরা থেকে জয়ী হন। ডালটনগঞ্জের বাড়িতে বসে হতভম্ব নামধারী বলেন, “আমার উপরে এমন আক্রমণ চলবে, ভাবতে পারছি না।” |