স্থগিতে চিড়ে ভিজছে না। তাদের দাবি, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে সরকারকে। আর এই কারণেই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে উদ্ধৃত করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত ‘স্থগিত’ করার কথা জানালেও বাম ও বিজেপি এখনও মুলতুবি প্রস্তাবের দাবিতে অটল। তাদের আশঙ্কা, সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেই সরকার ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারে।
বাম-বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজির সিদ্ধান্তে সরকারের পিছনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সমর্থন নেই। এই পরিস্থিতিতে মমতাকে সামনে রেখে সরকার পিছনের দরজা দিয়ে পালাতে পারে না। বরং সাহস থাকলে মুলতুবি প্রস্তাব এনে সরকার তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করুক।
রাজ্যসভায় বিরোধী দলের উপনেতা ও বিজেপি নেতা সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “এই স্থগিত শব্দের কোনও অর্থই হয় না। এর অর্থ সংসদের অচলাবস্থা এড়াতে সরকার আপাতত এই সিদ্ধান্ত বলবত করছে না। কিন্তু সংসদ শেষ হলেই অনায়াসে তা কার্যকর করতে পারবে। যত ক্ষণ না সরকার মন্ত্রিসভার ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করছে, বিজেপি মুলতুবি প্রস্তাবে অনড় থাকবে।”
বাসুদেব আচারিয়া, গুরুদাস দাশগুপ্তের মতো বাম নেতারাও মুলতুবি প্রস্তাবের দাবি থেকে পিছিয়ে আসতে চাইছেন না। গুরুদাসের বক্তব্য, “মমতাকে দিয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত করার ঘোষণা করিয়ে সরকার মুলতুবি প্রস্তাবে যে তৃণমূলের ভোটটি সুনিশ্চিত করতে চাইছে, তার অশনি সঙ্কেত দেখা যাচ্ছে। যত ক্ষণ না সরকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করছে, সংসদের বাইরে যেমন আন্দোলন চলবে, তেমনই সংসদে মুলতুবি প্রস্তাবের দাবি জানানো হবে। হারি-জিতি, মুলতুবি প্রস্তাব থেকে পিছু হঠার প্রশ্ন নেই।”
বিজেপি নেতাদের মতে, মমতাকে দিয়ে এই ঘোষণা করার মাধ্যমে সরকার আসলে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইল। প্রথমত, সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলে সরকার আর মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চাইবে না। দ্বিতীয়ত, বিরোধীদের চাপে যদি শেষ পর্যন্ত মুলতুবি প্রস্তাব আনতেই হয়, তা হলে মমতাকে দিয়ে সরকারের পক্ষে ভোট করানো হবে। মমতা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারকে তিনি অস্থির করবেন না। আজ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত সরকার বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখছে। মমতার দলও এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে সরকারের পক্ষে ভোট দেবে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, খুচরো ব্যবসার ইস্যুতে বিরোধী দলগুলির মধ্যে একটি ঐক্য গড়ে উঠেছে। ফলে সরকার যদি সিদ্ধান্ত পুরোপুরি প্রত্যাহার না করে, তা হলে আন্দোলন থামিয়ে রাখার কোনও প্রশ্ন নেই। অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথাও আগে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি প্রথমে পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি তুলে মমতা এখন যখন শুধু ‘স্থগিত’ হওয়ার সম্ভাব্য সিদ্ধান্তেই সন্তুষ্ট থাকছেন, তাতে অনাস্থা প্রস্তাবেও সরকারকে বাঁচাতে তৃণমূল শাসক দলের পক্ষে ভোট দেবে। তার উপরে বিজেপি-ও এখন ভোটের জন্য প্রস্তুত নয়। বরং মুলতুবি প্রস্তাবে বিরোধীদের জয় হলে সরকারের নৈতিক অধিকারের প্রশ্ন তুলে আরও কোণঠাসা করা যাবে। আর যারা সরকারের পক্ষে থাকলেন, তাদেরও মুখোশ খুলে প্রচার করা সম্ভব হবে।
তা ছাড়া, আগামী সপ্তাহ থেকেই লোকপাল নিয়ে অণ্ণা হজারে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে বিজেপি নেতারা সেই ইস্যুতেও সরকারকে বিঁধতে চান। ইতিমধ্যেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিজেপি তাদের অসন্তোষ জানিয়েছে। আগামী বুধবার সংসদের অধিবেশন ফের শুরু হওয়ার আগেই বিরোধীরা বৈঠক করে চূড়ান্ত কৌশল নির্ধারণ করতে চায়।
|