সুকনা জমি কেলেঙ্কারি মামলায় শেষ পর্যন্ত সামরিক আদালত দোষী সাব্যস্ত করল প্রাক্তন সেনাসচিব তথা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবধেশ প্রকাশকে। যার জেরে সেনাবাহিনী থেকে ‘বরখাস্ত’ করা হবে তাঁকে। ইতিমধ্যে তিনি অবসর নিলেও সামরিক আদালতের রায়ের পর সমস্ত আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন তিনি। সেনাবাহিনীর পেনশন, চিকিৎসা সংক্রান্ত সুবিধা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডকিছুই তিনি আর পাবেন না।
৬১ বছর বয়সী লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রকাশ সেনাবাহিনীর তৃতীয় অভিজ্ঞ ভারতীয় সেনা অফিসার, যাঁর সামরিক আদালতের বিচার হল। এর আগে আর এক উচ্চপদস্থ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি কে রথকেও এই মামলায় সামরিক আদালতে তোলা হয়। গত কালই কামরূপের নারেঙ্গি সামরিক আদালতে সুকনা কাণ্ডের বিচারপর্ব শেষ হয়। আজ তিনটি ক্ষেত্রে প্রকাশকে দোষী বলে রায় দেয় আদালত। তবে চতুর্থ মামলায় পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে খালাস পান তিনি। সেনাসূত্রের খবর, সেনা দণ্ডবিধির ৪৫, ৫২ ও ৫১ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রতারণা, নিজের পদের উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রয়োগ ও সেনাবাহিনীর অফিসার হিসাবে কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে তাঁকে অপরাধী হিসাবে গণ্য করা হয়।
শিলিগুড়ি শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে সুকনা সেনা ছাউনি। দার্জিলিংগামী ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই রয়েছে নিউ চামটা চা বাগান। এই বাগান লাগোয়া জমির সঙ্গেই রয়েছে সেনা ছাউনি। বাগান লাগোয়া ওই ৭১ একর জমি ‘গীতাঞ্জলি এডুকেশন্যাল ট্রাস্ট’কে হস্তান্তর করা নিয়ে বিতর্কের শুরু। সুকনার ৩৩ কোরের তৎকালীন কম্যান্ডার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্ট্যান্ট জেনারেল অবধেশ প্রকাশ ট্রাস্টকে ওই জমিতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার জন্য ছাড়পত্র দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
ওই ট্রাস্টের কর্ণধার দিলীপ অগ্রবাল গোড়া থেকে বলে আসছেন, চা বাগানের জমি পুরাটোই রাজ্য সরকারের থেকে লিজে নেওয়া। পাশে সেনা ছাউনি থাকায় তাঁদের কাছ থেকে একটি ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছিল মাত্র। ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব খাটানোর বিষয়ই নেই। ঠিক হয়েছিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হলে সেখানে অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান এবং অফিসারদের চাকরির সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া দেশের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন সমিতিতে সেনাবাহিনীর অফিসারদেরও রাখা হবে ঠিক হয়। তবে এই সেনা ছাড়পত্র বা এনওসি নিয়ে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে। তার জেরেই সেনাবাহিনীর তরফে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। শনিবার সামরিক আদালতের রায় ঘোষণার পর দিলীপ অগ্রবালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
২০০৮ সালে সুকনা কাণ্ড নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার পর কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি সামরিক আদালতের হাতে বিষয়টির বিচার ও তদন্তের ভার তুলে দেন। অবধেশ প্রকাশ ও ৩৩ কোরের প্রাক্তন কম্যান্ডার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি কে রথের বিরুদ্ধেই প্রধানত অভিযোগের তির ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রথকেও দোষী সাব্যস্ত করে সেনা আদালত। তিনি পদোন্নতি হারান, পেনশনের একাংশও কাটা যায়।
|