পূর্ব মেদিনীপুর
জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে স্বাস্থ্য অধিকর্তা
উনিফর্ম নয়, সাধারণ জামাকাপড় পরে হাসপাতালে ঘুরছেন নার্সরা।
প্রসূতি বিভাগের সামনের বারন্দার মেঝেয় সদ্যোজাতদের নিয়ে গাদাগাদি করে শুয়ে আছেন মায়েরা।
কয়লার গুলের উনুনে রান্নাঘরে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ৩০০ রোগীর খাবার তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছে সকলে।
সোমবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে এমনই কিছু ছবি দেখলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সর্বময় কর্তাকে সামনে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিজনেরা। অধিকাংশ সময় হাসপাতালের সুপার নিজেই অনুপস্থিত থাকেন বলে অভিযোগ জানান তাঁরা। এই অবস্থায় হাসপাতাল চলবে কী করে তা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদবাবু বলেন, “সুপার না থাকার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিবকে জানাব।” যদিও সুপার নিমাই মণ্ডলের বক্তব্য, “কিছু কর্মচারী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিল। অভিযোগ মিথ্যা।”
এ দিকে, হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসকের অভিযোগকে কেন্দ্র করে কর্মী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সুপারের বিরোধও প্রকাশ্যে এসেছে। হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট সোমালী রায়ের অভিযোগ, “বাইরে বেসরকারি সংস্থায় আলট্রা সোনোগ্রাফি করানোর চক্রে যুক্ত বিভাগেরই এক চিকিৎসক ও কর্মীদের একাংশ। আমার জন্য তাঁদের অসুবিধা হচ্ছিল। গত শুক্রবার স্টেট হেলথ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতা সত্যরঞ্জন সাউ প্রকাশ্যে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন।” এই নিয়ে থানায় ও স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সোমালীদেবী। কাজ না হওয়ায় এ দিন কলকাতায় গিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। যদিও সত্যবাবুর দাবি, “সুপারই ওই চিকিৎসককে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করাচ্ছেন।”
বিক্ষোভের মুখে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ স্বাস্থ্য অধিকর্তা তমলুকে জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন। হাসপাতালের আউটডোর, ব্লাডব্যাঙ্ক ঘুরে হোমিওপ্যাথি বিভাগে যান তিনি। ওই বিভাগ পরিদর্শনের সময় নার্সদের খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন, সাধারণ পোশাকেই কাজ করছেন তাঁরা। ফলে কে নার্স, আর কে রোগী বোঝা দায়। নার্সরা ইউনিফর্ম পরেননি কেন জানতে চান স্বাস্থ্য অধিকর্তা। বলাবাহুল্য জবাব মেলেনি।
এরপর পিপিপি মডেলে চলা স্ক্যান সেন্টার পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রসূতি বিভাগে যান। সেখানে বারান্দার মেঝেয় সদ্যোজাতদের নিয়ে সার দিয়ে শুয়েছিলেন প্রসূতিরা। স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে কাছে পেয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁদের বাড়ির লোকজনেরা। ময়নার বাঁকি গ্রামের চন্দন কর, পাঁশকুড়ার মালিদা গ্রামের কিশোর পাহাড়দের অভিযোগ, “সিজারের এক দিন পরেই নিচে মেঝেয় নামিয়ে দেওয়া হয়। ঠান্ডা মেঝেয় সদ্যোজাতকে সঙ্গে নিয়ে কুঁকড়ে শুয়ে থাকেন মায়েরা। চিকিৎসকের দেখা মেলে না।”
এই সব দেখার পর স্বাস্থ্য অধিকর্তা হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন, কয়লার গুলের উনুনে ধোঁয়ায় টেকা দায়। গ্যাসের উনুন ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন জানতে চান স্বাস্থ্য অধিকর্তা। সুপার জানান, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে গ্যাসের উনুন ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এ দিকে, সুপারের সামনেই তাঁর বিরুদ্ধে সরব হন রোগীর পরিজনেরা। সমস্যায় পড়লে সুপারকে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ জানান তাঁরা। তমলুকের মাহিষদা গ্রামের লক্ষ্মণ সামন্ত অভিযোগ করেন, মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেতে দু’বছর সময় লেগেছে তাঁর। হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদবাবু বলেন, “এই জেলা হাসপাতালে অত্যধিক ভিড়। ব্লক থেকে প্রচুর রোগী ‘রেফার’ হয়ে হাসপাতালে আসছেন। এ দিকে, হাসপাতালে পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। কর্মসংস্কৃতি নিয়েও অভিযোগ বিস্তর।” পরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দাস-সহ স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.