পোড়া ঘর নিয়ে গল্প দলগাঁওয়ে
দিনের বেলা সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও রাতে ভূতের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন দলগাঁও চা বাগানের বাসিন্দারা। তারকেশ্বর লোহারের পরিত্যক্ত ওই বাড়ি থেকে না কি নানা রকম শব্দ ভেসে আসে। গভীর রাতে বাগানের কয়েকজন না কি তা শুনেছেন। বিষয়টি মুখে মুখে ছড়াতে রাতের অন্ধকারে তারকেশ্বরের বাড়ির পাশের পথ মাড়ান না বহু বাসিন্দা। দলগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অ্যান্ড্রুজ ওঁরাওয়ের কাছে কয়েকজন বাসিন্দা এই সমস্ত কাণ্ডকারখানা হচ্ছে বলে দাবি করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। প্রধানের কথায়, “আমি থাকি পাশের বাগানে। তবে দলগাঁও বাগানের তারকেশ্বরের পরিত্যক্ত ওই ঘর থেকে নানা রকম আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে বলে কয়েকজনের মুখে শুনেছি। বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হলেও ওই ঘরটিকে এ ভাবে ফেলে রাখা ঠিক নয়। এতে মানুষের মধ্যে ভয় বাড়ে।” পাশাপাশি, দুষ্কৃতীরা রাতে ওি পরিত্যক্ত বাড়িতে ডেরা বাঁধার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি অনেকেই। সে কথা মাথায় রেখে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য, “ওই পোড়ো বাড়িটি ভেঙে ফেলে সামনের আগাছা পরিষ্কার করে ফুলের বাগান বা শিশু উদ্যান করলে ভাল হয়। তাতে ওই ঘটনা ভুলে থাকার পাশাপাশি ভুতের ভয় দূর হবে। বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্র বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।” বাগানের কর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র সিটু নেতা তথা বাগানের তথাকথিত ‘ডন’ তারকেশ্বর লোহারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন একদল বাসিন্দা। ২০০৩ সালের ৬ নভেম্বর সকালে প্রকাশ্যে লাঠিসোটা ও তলোয়ার নিয়ে তারকেশ্বর লোহারের বাড়ি ঘিরে রাখেন তাঁরা। সে সময় তারকেশ্বরের বেশ কিছু অনুগামী ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। উত্তেজিত মানুষ ঘরে ঢুকে কুপিয়ে, ঘর বন্ধ করে আগুনে পুড়িয়ে ১৯ জনকে হত্যা করে। গোটা বাড়ি পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে কোনও মতে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন তারকেশ্বরবাবু ও তাঁর পরিবারের লোকরা। ঘটনাস্থল থেকে ৭০ টি তলোয়ার উদ্ধার-সহ ১০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হন তারকেশ্বরও। ওই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাগানে ঢুকতে না পারলেও তাঁর দগ্ধ পরিত্যক্ত বাড়ি আজ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাসিন্দাদের কাছে। তারকেশ্বরের বাড়ির পেছনে থাকেন কেশবো খড়িয়া। তাঁর কথায়, “ঘটনার পর কয়েক মাস ভয় লাগত। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। ইদানিং ওই বাড়ির সামনে গেলে নাকি নানা রকমের টুং টাং আওয়াজ হয় বলে লোক মুখে শুনেছি। দিনের বেলা ছাড়া অন্য সময় বিশেষ প্রয়োজনেও ওই বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করি না।” বাগানের ফ্যাক্টরি লাইনে তারকেশ্বরের বাড়ির সামনেটা পার্থেনিয়াম আর আগাছার ঝোপে ছেয়ে গিয়েছে। বাড়ির সামনে তারকেশ্বরের সাধের ছোট্ট পুকুরটি আজ নেই। পিছনে একটি মাত্র ছাদহীন ঘরে দিনের বেলা ছেলেপুলেরা খেলাধুলা করে। সন্ধ্যার আগেই তারা বাড়ি ফেরে। দলগাঁও বাগানের বাসিন্দা তিতরি টুডুর কথায়, “রাতে ওই বাড়ির পাশ দিয়ে চলাফেরা করতে হাড় হিম হয়ে আসে। রাতে কঙ্কালসার ওই বাড়ির দিকে তাকালে ভয় করে। কিছুদিন ধরে বাগানে নানা ভুতের কথা শোনা যাচ্ছে। ওই বাড়িটি ঘিরে।” তবে ভৌতিক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন আলিপুরদুয়ার বিঞ্জান মঞ্চের সম্পাদক দেবী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ভূত বলে কিছু নেই। অজ্ঞতার কারণে এই ধরনের বিষয় বিশ্বাস করেন অনেকে। ব্যক্তি স্বার্থে কেউ ওই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে মনে হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.