নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
বামেদের আমলে ফুলবাড়ি, ডাবগ্রাম এলাকায় বহু সরকারি জমি বেদখল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার শিলিগুড়িতে এক সাংবাদিক বৈঠকে ওই অভিযোগ করেন তিনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর অভিযোগ, “ফুলবাড়ি এবং ডাবগ্রাম এলাকায় বহু সরকারি জমি দখল হয়ে গিয়েছে। টাকার অঙ্কে সেই জমির দাম ১ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে। সে সব অনেক ক্ষেত্রে জমির দলিল, মিউটেশনের পাকা নথি অবৈধ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। সরকারি দফতরগুলির আধিকারিকদের একাংশ যুক্ত না থাকলে এমন হওয়ার কথা নয়। পূর্বতন সরকারের আমলেই এসব হয়েছে। সমস্ত জমি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” ফুলবাড়ি এবং ডাবগ্রাম এলাকা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে। বাম জমানায় দীর্ঘদিন এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। সে কারণে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর অভিযোগের তির স্বাভাবিক ভাবে তাঁর দিকেই। প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর পাল্টা বক্তব্য, “দখলদারদের সরানো নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। তবে আমরা অনেক জায়গায় ভূমিহীনদের জমির পাট্টা দিয়েছি। অনেক বস্তি, কলোনি তৈরি হয়েছে। সে সব ক্ষেত্রে কোথাও বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা হলে প্রতিরোধ করা হবে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশাসনের তরফে ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরির যে কাজ হচ্ছে তাতে ওই সমস্ত জমি উদ্ধার করে নথিভুক্ত করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমা এবং রাজগঞ্জের যে সমস্ত এলাকায় সরকারি জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তা নথিভুক্ত করার কাজও চলছে। প্রসঙ্গত, রবিবার চম্পাসারি এলাকায় কয়েকটি দোকানে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হলে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তৃণমূলের কর্মীরাই ওই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সেগুলি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সাফ বুঝিয়ে দেন এ ক্ষেত্রে তিনি দলের রঙ বিচার করতে চান না। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “রাতের অন্ধকারে কে বা কারা দলের পতাকা লাগিয়ে যাচ্ছে তা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তবে এ ধরনের চেষ্টা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এ ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় মনোভাব, যাঁরা এর পিছনে রয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই একাধিক ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। রবিবার আমি নিজে এলাকায় গিয়ে জমি থেকে ঝান্ডা তুলিয়েছি।” গৌতমবাবু জানান, দলের তরফেও এ ধরনের কাজে কাউকে কোনও রকম প্রশ্রয় দেওয়ার প্রশ্ন নেই। কোনও সরকারি দফতরের জমি এ ভাবে দখলের চেষ্টা হলে সংশ্লিষ্ট দফতরকে পুলিশে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। চম্পাসারি এলাকায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের বচসায় উত্তেজনা ছড়ায়। কংগ্রেস সমর্থকরা চম্পাসারি বাজারের কাছে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তৃণমূলের চম্পাসারির নেতা মনা পাল বলেন, “যুব তৃণমূলের অনুষ্ঠানের জন্য কিছু পতাকা বাইরে লাগানো ছিল। তা খুলে কেউ ওই জমিতে পুঁতেছে। আমাদের উপরে মিথ্যে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই আমরা গিয়ে পতাকা খুলে নিয়ে আসি।” কংগ্রেসের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিখা রায় জানান, গত প্রায় ২৫ বছর ধরে চম্পাসারি মেন রোডের ধারে কাঠা দেড়েক জমি কংগ্রেসের তিন কর্মী রামচন্দ্র সরকার, জনার্দন রায় ও অনিল ঠাকুরের দখলে ছিল। তিনি বলেন, “সেখানে দোকান ছিল তাঁদের। রাস্তা চওড়া করার সময় দোকান ভেঙ্গে নেন তাঁরা। সেই থেকে জায়গাটি ফাঁকা পড়ে ছিল। তৃণমূল কর্মীরা রাতের অন্ধকারে সেখানে পতাকা ঝুলিয়ে দেয়। জোট রাজনীতিতে এটা কাম্য নয়।” শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি জানান, পূর্ত দফতরের একটি জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের উপস্থিতিতে তৃণমূলের কর্মীরা সেখান থেকে পতাকা সরিয়ে নেন। দুপক্ষের অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |