পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে মন কষাকষির মধ্যেই পণ্য ও পরিষেবা কর নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের।
সারা দেশে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর ৪% থেকে কমিয়ে ২% করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ জন্য রাজ্যের যে রাজস্ব ক্ষতি হবে, তা মিটিয়ে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। এ বার চাপানউতোর শুরু হয়েছে তা নিয়েই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, কেন্দ্রীয় বিক্রয় করের হার কমিয়ে দেওয়ার ফলে ২০১০-’১১ আর্থিক বছরে রাজ্যের আয় কমেছে প্রায় ৮৬০ কোটি টাকা। কিন্তু কেন্দ্র দিতে রাজি মাত্র ১৬০ কোটি টাকা। বাকি ৭০০ কোটি টাকা কোথায় গেল?
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, রাজ্য সরকার যদি যুক্তমূল্য করের (ভ্যাট) হার ৪% থেকে বাড়িয়ে ৫% করত, তা হলেই ৭০০ কোটি টাকার মতো বাড়তি রাজস্ব আসত। এর আগে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি ভ্যাট বাড়িয়ে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সায়ও দিয়েছিল। কেন্দ্র এখন সেই দায় বইতে রাজি নয়। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির বৈঠকে আজ জিএসটি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের শেষে অমিত মিত্র বলেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কেন্দ্র পুরো ক্ষতিপূরণেরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।” রাজ্যের তরফে সমস্ত জাতীয় মঞ্চেই এ বিষয়ে সওয়াল করা হবে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর কমানোর ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিবাদ বেধেছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গেও। রাজ্যগুলির বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ভ্যাটের হার বাড়ানো বা কমানো পুরোপুরি রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত। সেখানে কেন্দ্র নাক গলাতে পারে না। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর কমানোর ফলে ক্ষতিপূরণের সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে লাভের বিষয়টি কোনও ভাবেই যুক্ত করা যাবে না। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অতীতে অর্থমন্ত্রীদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিই এ বিষয়ে রাজি হয়েছিল। সেটা রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরাও মানছেন। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, ক্ষতিপূরণের হিসেব কষার সময় ভুল করে এ বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বক্তব্য, ভ্যাটের হার ৪% থেকে ৫% করার ফলে যে রাজস্ব লাভের হিসেব করেছে কেন্দ্র, তাতেও ভুল রয়েছে। শিল্পে কাঁচামালের উপর ভ্যাট আগেই মিটিয়ে দেওয়া হয় বলে কেন্দ্রের হিসেব মতো অর্থ আদায় হয় না। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, কেন্দ্র যদি এই নীতি নিয়ে চলে, তা হলে চলতি আর্থিক বছরেও রাজ্য সরকারের বিপুল ক্ষতি হবে। মহাকরণের হিসেবে, ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর কমানোর ফলে রাজ্যের ক্ষতি হবে ১১৮৬ কোটি টাকা। তার মধ্যে ভ্যাট-বাবদ আয় হিসেবে কেন্দ্র ৭৯৮ কোটি টাকা কেটে নিতে চাইবে। ফলে রাজ্য পাবে ৩৮৮ কোটি টাকা। কেন্দ্র নীতি না বদলালে আগামী দিনেও তাই রাজ্যের সঙ্গে বিরোধ অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে পণ্য ও পরিষেবা কর প্রযোজ্য হবে না, তার তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। তবে এ বিষয়েও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিটির চেয়ারম্যান, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী জানান, সচিবদের নিয়ে তৈরি একটি কমিটি খসড়া তালিকা খতিয়ে দেখবে। রাজ্যগুলি পরে নিজেদের মতামত জানাবে। |