|
|
|
|
মেডিক্যাল কলেজে ফেসবুকে ‘মন’ পড়ুয়াদের |
নজরদারি বাড়াতে বসছে সিসি-ক্যামেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পড়াশোনার জন্য কম্পিউটার-রুমে ঢুকে ছাত্রছাত্রীরা ফেসবুক, অরকুটের মতো সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট খুলে বসছেন। পরিচিতদের সঙ্গে চ্যাট করছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এমন নালিশ মাঝেমধ্যেই আসে। কখনও এমন নালিশও শুনতে হয় যে, কেউ কেউ ‘রিডিংরুমে’ দীর্ঘক্ষণ শুধু গল্পই করছেন। ফলে, অন্যদের পড়াশোনায় অসুবিধা হচ্ছে। এ হেন পরিস্থিতিতে এ বার মেদিনীপুর মেডিক্যালের কম্পিউটার-রুম, রিডিংরুম, লাইব্রেরি-সহ পাঁচ জায়গায় ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার মাইতি জানিয়েছেন, আপাতত পাঁচটি ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি জায়গায় ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁর কথায়, “সর্বত্র নজরদারি বাড়াতেই এই সিদ্ধান্ত।” কলেজের এক আধিকারিক স্পষ্টই বলেন, “কম্পিউটার-রুম, রিডিংরুমে ঢুকে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন কি না, তা দেখাও ক্যামেরা বসানোর অন্যতম উদ্দেশ্য।”
কলেজ সূত্রে খবর, পরীক্ষার ঘর ও মেডিক্যালে ঢোকার মুখেও একটি করে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে। এর ফলে কলেজে কারা ঢুকছেন, সে দিকেও নজর রাখা সম্ভব হবে। তবে, শুধু কলেজেই নয়, হাসপাতাল ভবনের বেশ কয়েকটি জায়গাতেও ক্যামেরা বসানোর কথা ভাবা হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্যই এমন ভাবনা। এমনিতেই হাসপাতাল ক্যাম্পাসের চারদিকে উঁচু প্রাচীর নেই। ফলে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না-থাকায় রাতে সমস্যায় পড়েন রোগীর পরিবারের লোকজন। তুলনায় নিরাপত্তারক্ষীও কম। ফলে পুরো হাসপাতাল চত্বরে নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। সাধারণত, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকার কথা। কিন্তু, মেদিনীপুরে তা-ও নেই। তাই, প্রায়ই নানা সমস্যা হয়। অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে জানাতে হয় কোতোয়ালি থানায়। তার পর আসে পুলিশ। হাসপাতাল সুপার রামনারায়ণ মাইতি বলেন, “এখানে পুলিশ ফাঁড়ি তৈরির কথা অনেক বারই বলা হয়েছে। প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, এখনও সেই প্রস্তাবে সাড়া মেলেনি।” তাঁর কথায়, “নজরদারি চালানোর জন্যই ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে।”
হাসপাতাল সূত্রে খবর, স্বাস্থ্য দফতর সবুজসংকেত দিলে সব মিলিয়ে ৫৬টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে। পুরনো ভবনের পাশাপাশি নতুন ভবনের ওয়ার্ডগুলিতেও ক্যামেরা থাকবে। ফলে, ওয়ার্ডে কী হচ্ছে, হাসপাতাল কর্মীরা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, এ সব কিছুর উপরেও নজরদারি চালানো সম্ভব হবে। ক্যামেরাগুলির সঙ্গে যোগসূত্র থাকবে তিনটি মনিটরের। এর মধ্যে একটি মনিটর থাকবে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে। একটি হাসপাতাল সুপারের ঘরে। অন্যটি সিকিওরিটি ইনচার্জের ঘরে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই রোগীরা এখানে আসেন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে যেমন রোগীদের ভিড় থাকে, বিভিন্ন ওয়ার্ডেও অসুস্থ লোকজন ভর্তি হন। রোগীর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন অনেকেও নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে হাসপাতাল ভবনে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। ফলে, চিকিৎসা পরিষেবাও ব্যাহত হয়। ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা বসানো হলে ওয়ার্ডে কারা ঢুকছেন, কারা বেরোচ্ছেন--তা নজরে রাখা সম্ভব হবে। হাসপাতাল ভবনে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যভবনে পাঠানোও হয়েছে। এখনও সবুজ-সংকেত মেলেনি। তবে, মেডিক্যাল কলেজে ক্যামেরা বসানোর ক্ষেত্রে সবুজসংকেত মিলেছে। কলেজ সূত্রে খবর, এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। আপাতত, কম্পিউাটার-রুম, রিডিংরুম, পরীক্ষার হল, লাইব্রেরি ও কলেজে ঢোকার মূল গেটের কাছে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে। মেডিক্যাল কলেজের কম্পিউটার-রুমে মোট ৬টি কম্পিউটার রয়েছে। প্রতিটিতেই ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। পড়াশোনার জন্যই ছাত্রছাত্রীরা কম্পিউটার ব্যবহার করেন। বিভিন্ন সাইট খুলে অজানা তথ্য জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু, এ সবের মধ্যেই কেউ কেউ ফেসবুক, অরকুটের মতো সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট খুলে বসে থাকেন বলে অভিযোগ। এ বার তাতেই ছেদ পড়তে চলেছে। |
|
|
|
|
|