একটা নয়, দু’টো নয়, একেবারে তিন-তিনটে টুর্নামেন্টে জয়। শেষ এক মাসের মধ্যে। টেনিসের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জো উইলফ্রেড সঙ্গাকে ৬-৩, ৬-৭ (৬-৮), ৬-৩ উড়িয়েও দিলেন। তবু রজার ফেডেরার আর নায়ক হলেন কই? সেই তো ট্র্যাজিক নায়ক হয়েই থাকতে হচ্ছে!
হবে না-ই বা কেন? বছর শেষে তিনটে টুর্নামেন্ট জিতলেন, তবু র্যাঙ্কিংয়ে থাকতে হচ্ছে তিন নম্বরে। গত আট বছরে এই প্রথম তিনি কোনও গ্র্যান্ডস্ল্যাম ঘরে তুলতে পারলেন না। ২০০৩-এ প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতেছিলেন ফেডেরার। উইম্বলডন। তার পর থেকে ২০১০ পর্যন্ত কোনও না কোনও গ্র্যান্ডস্ল্যাম তিনি প্রত্যেক বার পেয়েছেন। আর এ বছর? মর্যাদার চেয়ে অসম্মানের খতিয়ানই বেশি।
এ বারই টেনিসজীবনের সবচেয়ে খারাপ র্যাঙ্কিংয়ে নেমে এসেছিলেন। চার নম্বরে। ২০১১-র জানুয়ারিতে দোহাতে এটিপি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। কিন্তু পরের দশ মাস কিছু জেতেননি।
সম্মানের তালিকায়, শুধু শেষ এক মাসে তিনটে টুর্নামেন্ট জয়। বাসেল ওপেন। প্যারিস মাস্টার্স। এবং রবিবার সঙ্গাকে হারিয়ে টেনিসের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ।
কিন্তু সেখানেও যে আবার প্রশ্ন থাকছে।
|
টেনিসের বিশ্বচ্যাম্পিয়শিপ খেলতে নেমে রেকর্ড করলেন একাধিক। ১৯৭০ সাল থেকে চালু হওয়া এই টুর্নামেন্টে আজ পর্যন্ত ছ’বার কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। ফেডেরার সেটা করে দেখালেন। ভেঙে দিলেন ইভান লেন্ডল ও পিট সাম্প্রাসের রেকর্ড (দু’জনেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন পাঁচ বার করে)। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বয়স্ক প্লেয়ার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হলেন। তিরিশ বছর বয়সে। ফেডেরার এখানেও ভেঙে দিলেন ইলি নাস্তাসের রেকর্ড। যিনি কি না ২৯ বছরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, শেষ তিনটে টুর্নামেন্টে কোথাও সেরা প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাল্লায় পড়তে হয়নি ফেডেরারকে। না নাদাল, না জকোভিচ, না মারে। কখনও এঁরা আগেই হেরে গিয়েছেন। নইলে টুর্নামেন্টেই খেলেননি। স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ আর ফেডেরার তা হলে দিলেন কোথায়? এ তো স্রেফ ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া।
বিশ্বজুড়ে ‘ফেড-এক্সপ্রেস’ ভক্তকুলের অবশ্য তাতে বয়েই গিয়েছে। মহেশ ভূপতিকেই ধরা যাক। ফেডেরার রবিবার জিতে উঠতে না উঠতেই তিনি টুইট করেছেন, “যারা বলে রজার ফেডেরার টেনিসের সর্বকালের সেরা নয়, তাদের মস্তিষ্ক দেখানো উচিত। কারণ সংখ্যা কখনও মিথ্যে বলে না। আর সংখ্যায় ফেডেরার সবার চেয়ে এগিয়ে।” রবিবার আবার ফেডেরারের জীবনেরও স্মরণীয় একটা দিন ছিল। ছ’বার উইম্বলডনের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপও তিনি ছ’বার জিতলেন বলেই শুধু নয়, গত কালই ছিল ফেডেরারের একশোতম সিঙ্গলস ফাইনাল। যার মধ্যে তিনি জিতেছেন সত্তরটি। আর সঙ্গাকে হারানোর মধ্যেও একটা তাৎপর্য আছে। ফেডেরার নিজেই সেটা জানাচ্ছেন। বলছেন, “এই ট্রফিটা লন্ডনে সঙ্গাকে হারিয়ে পেলাম বলে ভাল লাগছে। কারণ উইম্বলডন কোয়ার্টার ফাইনালে এই সঙ্গার কাছেই হারতে হয়েছিল। যদিও উইম্বলডন আমার কাছে সব সময়ই স্পেশ্যাল।” এবং বছরের শেষ থেকে পরের বছরের রসদ যে নিয়ে রাখছেন সেটাও বলছেন ফেডেরার। বলে রাখলেন, “শেষ কয়েকটা সপ্তাহ বেশ ভাল খেলেছি আমি। পরের বছরের জন্য আত্মবিশ্বাসটাও পাওয়া গেল। জানি যে, এ বছর বেশ কয়েকটা গ্র্যান্ডস্ল্যাম হাতছাড়া করেছি। কিন্তু আমি ফিরে আসব। আশা করছি আগামী বছর লন্ডন থেকেই সেটা শুরু হবে।”
|