বিএনআর-১ (প্রসেনজিৎ)
মোহনবাগান-২
(ওডাফা-২) |
নব্বই মিনিট পর্যন্ত স্কোর বোর্ড, বিএনআর-১ : মোহনবাগান-০।
বাগানে তখন শুধুই অন্ধকার। মাথায় হাত সুব্রত ভট্টাচার্যেরও।
রেফারির গোপন সঙ্কেত দেখে চতুর্থ রেফারি চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। বোর্ড দেখালেনইনজুরি টাইম ছয় মিনিট!
আর ওই অতিরিক্ত সময়েই ঝলসে উঠল ওকোলি ওডাফার দু’টো পা। যেন খোলা দু’টো তরবারি। গোলমেশিনের তিন মিনিটের তাণ্ডব। অন্ধকার কেটে রোদ্দুর ফিরে এল বাগানে। সুব্রতর মুখেও হাসি। কলকাতা লিগে প্রথম হারের দোড়গোড়ায় পৌঁছেও শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেল মোহনবাগান। গোলমেশিনের সৌজন্যে।
চার্চিল ব্রাদার্সে যখন ছিলেন তখন এ রকম বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন, পুরো দলকে কাঁধে বয়ে নিয়ে। কিন্তু সবুজ-মেরুন জার্সি পরে এ পর্যন্ত তাঁর সেই ঝলক কোথায়? উল্টে চারিদিকে ফিসফাস। তা হলে চোট নিয়েই এসেছেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। নিজেকে চেনাতে তাই এ রকম একটা মঞ্চই যেন খুঁজছিলেন দেশের সবথেকে দামি ফুটবলার।
যন্ত্রণায় বিদ্ধ হতে হতে সোমবার যে কাণ্ডটা ওডাফা ঘটালেন তা এককথায় অবিশ্বাস্য। তিন মিনিটে ব্যবধানে এমন দুটো গোল করে দলকে জেতালেন যা সচরাচর হয় না। প্রথম গোলটি তাঁর পা থেকে এল ৯৩ মিনিটে। অসীম বিশ্বাসের লম্বা ক্রসটা যখন তাঁর কাছে এল তখন লজ্জায় অধোবদন হয়ে গ্যালারির বেশির ভাগ দর্শক বাড়ির পথে। ওডাফা সে দিকে তাকালেনই না। বলটা ধরে লম্বা একটা দৌড়ে ছিটকে বেলাইন করে দিলেন রেল ডিফেন্সকে। ১-১। |
হাতে আর মাত্র ইনজুরি টাইমের এক মিনিট। ঈশ্বর যেন ভর করেছেন ওডাফার উপর। না হলে দেহের দোলায় একসঙ্গে রেলের চার ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিতে পারেন! সেটাই করলেন। টিমকে অন্ধকার থেকে আলোয় এনে দেওয়ার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য মিডিয়ার কী হুড়োহুড়ি! লম্বা কালো পেটানো চেহারাটা থেকে বেরোলো দুটো লাইন, “তা হলে ঈশ্বর এখনও আছেন আমার সঙ্গে।”
পাশের মাঠের ট্রেভর মর্গ্যানের দেখানো পথে ম্যাচ জিততে কার্যত রিজার্ভ বেঞ্চকেই নামিয়ে দিয়েছিলেন বাবলু। কিন্তু কী হতশ্রী চেহারা মোহনবাগান বেঞ্চের। দল নামাতেও ভুল করেছিলেন সুব্রত। স্টপার ড্যানিয়েলকে নামিয়েছিলেন মাঝমাঠে। কিন্তু সেটা তো তাঁর পজিসনই নয়। ফলে পথ হারিয়ে ফেলা পথিকের মতো অবস্থা হল সদ্য টিমে ঢোকা অস্ট্রেলিয়ানের। কিছুই খেলতে পারছিলেন না। তাঁর সঙ্গে নামা প্রদীপ, মণীশ, গৌরাঙ্গও যে একই রাস্তায় হাঁটলেন। একটা ভাল পাস নেই, একটা ভাল মুভ নেই, সেট পিসেও চূড়ান্ত ব্যর্থতা। ফলে যা হওয়ার তাই হল। এগিয়ে গেল রেল। বিরতির পর গোলটা করলেন এক প্রতিশ্রুতিমান ছেলেপ্রসেনজিৎ পণ্ডিত। আই এফ এ-র নিয়ম মেনে অনূর্ধ্ব ১৯ ফুটবলার হিসাবে যাকে নামিয়েছিলেন রেল কোচ।
আই লিগে প্রয়াগের কাছে হারার পর এমনিতেই মোহনবাগান হত্যোদম ছিল। রেলের কাছে পিছিয়ে পড়ার পর সেটা যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে গেল। সিঁদুরে মেঘ দেখলেন সুব্রত-প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়রা। নামিয়ে দিলেন টিমের জোড়া ফলাওডাফা এবং ব্যারেটোকে।
কিন্তু শুধু মাথা বদলালে কী হবে মোহনবাগানের বাকি অংশ তো তখন ঘুণ ধরে গেছে। রক্ষণ খারাপ না খেললেও মাঝমাঠে ভাল পাসারের অভাবে পুরো টিমটাকেই নড়বড়ে দেখাচ্ছে। ফলে নির্ধারিত নব্বই মিনিট পর্যন্ত জোড়া ফলাও ব্যর্থ।
তারপর তো ওডাফা-ম্যাজিক।
|
মোহনবাগান: সুদীপ্ত, সুরকুমার, সৌরভ, কিংশুক, দলজিৎ, গৌরাঙ্গ, প্রদীপ (ওডাফা), ড্যানিয়েল, মনীশ (অবিনাশ), অসীম, সাকতার (ব্যারেটো)।
|
মঙ্গলবার
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে:
মহমেডান : টালিগঞ্জ অগ্রগামী (যুবভারতী, ২-১৫) |