হাওড়া
রাতে মাছবাজারে নিহত দুই কর্মচারী
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাওড়া জেলা সফরের ঘণ্টাখানেক আগে সেখানকার পাইকারি মাছবাজার থেকে উদ্ধার হল দুই কর্মচারীর রক্তাক্ত মৃতদেহ। সোমবার শেষ রাতের এই ঘটনায় হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। সম্প্রতি হাওড়া শহরের অপরাধ দমনে জেলা পুলিশ থেকে তৈরি হয়েছে পুলিশ কমিশনারেট। তার পরেও শহর জুড়ে একের পর এক খুনের ঘটনা পুলিশের ভূমিকাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, মৃত ওই দুই কর্মচারীর নাম বিনয় সাউ (৫৫) ও চন্দন সাউ (২২)। তাঁরা ওই বাজারে বরফ দিয়ে মাছের বাক্স প্যাকিং করার কাজ করতেন। কিন্তু কেন এই খুন, তা এখনও পরিষ্কার নয় পুলিশের কাছে। তদন্তে নেমে পুলিশের সামনে উঠে এসেছে বেশ কিছু প্রশ্নও। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন ভোর ৪টে নাগাদ মাছবাজার খোলার পরে ব্যবসায়ীরা দেখেন, ১৬ নম্বর স্টলে পড়ে বিনয়ের রক্তাক্ত দেহ। তাঁর মাথায় গভীর আঘাতের চিহ্ন এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে লোহার রডের ক্ষত। ওই স্টলের নীচেই পড়ে ছিল চন্দনের দেহ। তাঁরও শরীরে, মাথায় বিনয়ের মতো আঘাতের চিহ্ন। বিনয় ও চন্দনের দেহ দেখে প্রবল আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। গোলাবাড়ি থানার পুলিশ আসে। পৌঁছন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারাও। মোহিন্দর সাউ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের দোকান বন্ধ ছিল। ভোরে এসে সব জানতে পারি। কেন এই খুন, বোঝা যাচ্ছে না।”
এখানেই পড়ে ছিল একটি দেহ। নিজস্ব চিত্র
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, ঘুমন্ত অবস্থায় ওই দু’জনের মাথায় দুষ্কৃতীরা ভারী কিছু দিয়ে প্রথমে আঘাত করে। তার পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বরফ ভাঙার জন্য যে লোহার রড ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে খোঁচায়। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দু’টি লোহার রড উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই স্টল সংলগ্ন অন্যান্য স্টলে যে সব কর্মচারী শুয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকে তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। যদিও তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম বলতে চাননি পুলিশকর্তারা।
হাওড়া পাইকারি মাছবাজারের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি যে প্রশ্নগুলি পুলিশকে ভাবাচ্ছে, তা হল বাজারের চারটি কোল্যাপসিব্ল গেটই রাতে বন্ধ থাকে। থাকেন নিরাপত্তারক্ষীও। তা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীরা ঢুকল কী ভাবে? ওই ১৬ নম্বর স্টলের পাশেই অন্য স্টলেও লোকজন শুয়েছিলেন। তাঁরা কোনও আওয়াজ পেলেন না কেন? হাওড়া সিটি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (উত্তর) রশিদ মুনির খান বলেন, “দোকান সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই এই খুন বলে মনে হচ্ছে। তবে প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তিন জনকে আটক করা হয়েছে।”
পুলিশ জানায়, ১৬ নম্বর স্টলটিতে মূলত বরফ দিয়ে মাছের বাক্স প্যাকিং করার কাজ হত। স্টলের মালিক মহেন্দ্রপ্রসাদ সাউ। দু’বছর আগে তিনি ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী রবি কুমারকে স্টলটি ভাড়া দেন। সেখানেই দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করতেন বিহারের দানাপুরের বাসিন্দা বিনয় ও মধুবনীর বাসিন্দা চন্দন। এ দিন খবর পেয়ে হাওড়ায় চলে আসেন রবি কুমার। তিনি বলেন, “স্টলটি আমি ভাড়া নিলেও বিনয়কে দেখাশোনার দায়িত্ব দিই। চন্দনও বহু দিনের কর্মচারী। প্রায় রোজই বিনয় আমাকে ফোন করে ব্যবসার কথা জানাত। কিন্তু রবিবার ফোন করেনি। বুঝতে পারছি না কেন ওরা খুন হল।”
রবিবার রাতে যারা মাছবাজারে ছিলেন, তাঁরা কেউই এ নিয়ে মুখ খোলেননি। প্রত্যেকেরই দাবি, তাঁরা কোনও আওয়াজ শোনেননি। ‘হাওড়া হোলসেল ফিশ মার্কেট স্টল ওনার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি’-র যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাসুদ বলেন, “রাতে সব গেট বন্ধ থাকে। রক্ষী বাইরে টহল দেন। তা সত্ত্বেও কী করে এই ঘটনা ঘটল, বুঝতে পারছি না। আমাদের প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.