দেড় মাসের ছেলে কোলে হাসপাতালের সামনে পথে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন মা। ছেলেকে নিয়ে যেতে হবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু আরামবাগ থেকে সেখানে যাওয়ার রেস্ত ছিল না। গাড়ি থামিয়ে কাকুতি-মিনতি করেও কাজ হয়নি। কেউ রাজি হননি ৮০০ টাকা ভাড়ার দূরত্ব বিনাপয়সায় নিয়ে যেতে।
এগিয়ে এলেন প্রমোতোষ রায় ওরফে বুড়ো। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক পেশায় হকার। আরামবাগ হাসপাতালের কাছেই রাস্তায় কলা বেচেন। ৫০০ টাকা তিনি তুলে দেন দিনমজুর পরিবারের ওই বধূর হাতে। যে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হল শিশুটিকে, তার চালক পিন্টু মল্লিক দম্পতির কাছ থেকে বাকি ৩০০ টাকা নেননি। পিন্টু বলেন, “বুড়োর কাজ দেখে আমিও ঠিক করি, পুরো টাকা নেব না। মালিককে বলেছি, মাইনে থেকে কেটে নেবে।”
সব মিলিয়ে দুই যুবকের তৎপরতায় শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গিয়েছে। অসুস্থ শিশুর মা মধুমিতা অধিকারী বলেন, “যে দাদার দেওয়া টাকায় হাসপাতালে এলাম, তাঁর নাম-পরিচয় কিছুই জানি না। ছেলেকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরে আগে ওঁর কাছেই যাব।” পিন্টুর প্রতিও তিনি ‘কৃতজ্ঞ’ বলে জানিয়েছেন মধুমিতা। |
‘বুড়ো’র এমন পরিচয় আরামবাগের মানুষ আগেও পেয়েছেন। অনেকের বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দিন কয়েক আগেই আট হাজার টাকা, কাগজপত্র-সহ একটি ব্যাগ হারিয়েছিল মিনতি রায়ের। কুড়িয়ে পেয়ে ফিরিয়ে দেন বুড়ো। বুড়োর আদি বাড়ি বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার বাগলপুর গ্রামে। গত পনেরো বছর ধরে রুটি-রুজির টানে আরামবাগে এসেছেন। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার। বুড়োর স্ত্রী রুবি রায় বলেন, “নিজেদেরই সংসার চলে না। কিন্তু আমার স্বামী ও রকমই। আমিও আপত্তি করি না।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, কাষ্ঠদহি গ্রামের গোরাচাঁদ অধিকারীর স্ত্রী মধুমিতা রবিবার রাতে দেড় মাসের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন আরামবাগ হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটির ‘ব্রঙ্কাল নিউমোনিয়া’ হয়েছে। উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য রবিরারই শিশুটিকে বর্ধমানে ‘রেফার’ করা হয়। হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স না থাকায় গাড়ি ভাড়া করা ছাড়া উপায় ছিল না। মুশকিল-আসান করেন বুড়ো। নিজের সংসারেই টানাটানি। টাকাটা দিলেন কী করে? বুড়োর জবাব, “মানুষের জীবন আগে, না আমার পুঁজি আগে?” |