সাহাগঞ্জের বন্ধ কারখানা খোলার ‘পূর্বশর্ত’ হিসেবে রাজ্যের কাছে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন ডানলপ কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে আর্থিক সুযোগ-সুবিধালাভের দাবিও রয়েছে। আর এরই পাল্টা হিসেবে রাজ্য ডানলপের কাছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বকেয়া পাওনার হিসেব তৈরি করেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
কারখানা খোলার প্রশ্নে ডানলপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু কোনও পক্ষের অবস্থানের পরিবর্তন না-হলে জট আদৌ কাটবে কি না, তা নিয়ে সব মহলেই বিস্তর সংশয়। এরই মধ্যে রাজ্যের হাতে রিপোর্ট এসেছে, টায়ার নির্মাতা সংস্থাটির কাছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পাওনা দাঁড়িয়েছে ৭২ কোটি টাকারও বেশি। যেমন, শুধু বিক্রয়কর বাবদ রাজ্যের পাওনা ৪০ কোটি টাকা। ভূমি-রাজস্ব বাবদ প্রায় ৮ কোটি। উপরন্তু রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম পায় ৯ কোটি, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি ১১ কোটি ২০ লক্ষ ও বাঁশবেড়িয়া পুরসভা ৪ কোটি টাকা।
এই পরিস্থিতিতে এখনই কোনও কড়া অবস্থান ঘোষণা না-করলেও ডানলপ কর্তৃপক্ষকে ‘চাপে রাখতে’ সমস্ত পাওনার রিপোর্ট তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। সাহাগঞ্জের কারখানা বন্ধ হওয়ার পরে ডানলপের কর্তারা শিল্পমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার পরে ডানলপ বোর্ড বৈঠক করে রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানায়, তারা ‘ধাপে ধাপে’ কারখানা খুলতে আগ্রহী। তবে সে জন্য কয়েকটা শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়। সেগুলো কী?
প্রথমত ডানলপ-কর্তৃপক্ষের দাবি, কারখানার ফাঁকা জমিতে তারা যে ৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে চাইছে, সরকার তার প্রয়োজনীয় অনুমতি দিক। দ্বিতীয়ত, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও কারখানা পুনরুজ্জীবনের জন্য ঋণ জোগানোর ব্যাপারে রাজ্য সরকার ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলুক। তৃতীয়ত, দফায় দফায় কারখানা খোলার প্রস্তাবে রাজ্যের মতামত জানানো হোক। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু অবশ্য প্রথম দিন থেকেই এর বিরোধিতা করে বলেছেন, দফায় দফায় নয়, কারখানা খুলতে হবে একসঙ্গে। এবং একমাত্র সেটা হলেই অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ডানলপ-কর্তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য।
এখনও দু’পক্ষই নিজের নিজের অবস্থানে অনড়। কারখানা খুলবে কবে?
ডানলপের এক কর্তা বলেন, “আমরা ধাপে ধাপে কারখানা খুলতে তৈরি। তবে তার আগে আমাদের প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকারকে মতামত জানাতে হবে।” ওই কর্তার কথায়, “সংস্থার বক্তব্য লিখিত আকারে সরকারকে অনেক আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকার আমাদের কিছু জানায়নি।” শ্রমমন্ত্রীর পাল্টা বক্তব্য, “ওদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। কিন্তু কারখানা খোলা নিয়ে কোনও শর্ত আরোপ করা চলবে না।” শিল্পমন্ত্রী বলেন, “কারখানা খুলতে না-পারার কারণ শ্রম-সংক্রান্ত নয়। সবটাই ব্যবসা সংক্রান্ত।” এই টানাপোড়েনের মধ্যে অনিশ্চিত দিন কাটাচ্ছেন ডানলপের শ্রমিকেরা। সরকারের এক মুখপাত্র জানাচ্ছেন, “রুইয়া গোষ্ঠী কারখানা বন্ধ করে চলে গেলে পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকারের শিল্প-ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই রাজ্য এ ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে এগোতে চাইছে। তাই বলে আপাতদৃষ্টিতে অযৌক্তিক বা অন্যায় কোনও দাবি বা শর্ত মানা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।”
এই অবস্থায় সরকারের পাওনা টাকা ফেলে রাখার ব্যাপারে ডানলপ-কর্তৃপক্ষের কী বক্তব্য?
সংস্থার এক সূত্রের দাবি, এর মধ্যে বেশ কিছু পাওনা নিয়ে আপত্তি তুলে আদালতে মামলা করা হয়েছে। অনেক পাওনার বিস্তারিত হিসেব চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে সূত্রটির অভিযোগ। সরকার কি এ বার ডানলপের কাছে পাওনা টাকা চাইবে?
শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, “কারখানা যদি বন্ধই থাকে, তা হলে চাইতে হবে।” আর শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবুর মন্তব্য, “পরের বৈঠকে সব কিছু নিয়ে আলোচনা হবে।” |