তিনটি রাজ্য জানাইয়াছে, আর নহে। নূতন আর কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রয়োজন নাই। এখনই যতগুলি আছে, তাহাতে শূন্য আসন প্রচুর। সুতরাং অনুমোদনকারী সংস্থা এ আই সি টি ই যেন সেই রাজ্যগুলিতে নূতন কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়িবার প্রস্তাবে সায় না দেয়। পরিভাষায় এই সংকট, রাজ্যগুলির বক্তব্য অনুযায়ী, প্রবলেম অব প্লেনটি! অভাব নহে, বরং আধিক্যের সমস্যা। গত এক দশক ধরিয়া দেশ জুড়িয়াই নূতন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়িবার জোয়ার আসিয়াছে। এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে বেসরকারি লগ্নির প্রবেশ উন্মুক্ত করিয়া দিবার পরেই এই জোয়ার। তাহাতে সুবিধা হইয়াছে প্রভূত। চাহিদার সহিত তাল মিলাইয়া চলিবার ন্যায় একাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গঠিত হইয়াছে। সমস্যাও দেখা দিয়াছে কিছু। তাহারই একটি বিশিষ্ট প্রকাশ অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থানের এই অনুরোধ যে, ঢের হইয়াছে, আর কোনও নূতন কলেজ চাহি না। এই তিনটি রাজ্যের ভিতরে পশ্চিমবঙ্গ নাই। স্মরণে রাখা ভাল যে চলতি বৎসরে এই রাজ্যের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-এ অন্তত আট সহস্র আসন শূন্য!
প্রশ্ন উঠিবে, চাহিদার তত্ত্ব মানিয়াই তো একাধিক নূতন কলেজ-এর গঠন। তাহা হইলে আসন শূন্য থাকিতেছে কেন? এ আই সি টি ই-র পর্যবেক্ষণ হইতেই একাধিক কারণ উঠিয়া আসে। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিশেষ কিছু শাখা তেমন জনপ্রিয় নহে। শিক্ষার্থীরা সেই সকল বিষয় অধ্যয়ন করিতে চাহেন না, যাঁহারা পড়েন তাঁহাদের অধিকাংশই প্রার্থিত অন্য কিছু শাখায় সুযোগ না-পাইয়া তাহা পড়িতে আসেন। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন মহানগরের নিকটবর্তী কলেজগুলিতে ভিড় বেশি। তাহাই স্বাভাবিক। এমনকী ক্ষুদ্রতর শহরাঞ্চলের সন্নিকটে যে সকল কলেজ, তাহাও প্রার্থিতের তালিকায় পড়ে। প্রান্তিক এলাকার কলেজগুলিতে শিক্ষার্থীর ভিড় কম। স্বাভাবিক। বুঝা কঠিন ইহাই যে, কলেজ গড়িবার বিষম হুড়াহুড়ির ভিতর এই কথাগুলি মাথায় রাখা হয় নাই কেন?
তৃতীয় একটি জিজ্ঞাস্য থাকে। এমনকী প্রান্তিক এলাকাতেও শিক্ষার্থীরা আসিবেন, যদি সেই প্রতিষ্ঠানের পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামোটি থাকে। একদা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলিকাতা হইতে বহু দূরবর্তী হওয়া সত্ত্বেও পরিকাঠামোর গুণে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ তো বটেই, এমনকী পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান হইতেও শিক্ষার্থীদের টানিয়া আনিয়াছিল। বোলপুর নামক জায়গাটি প্রত্যন্ত, সুতরাং সেখানে যাইব না বলিয়া কেহ তাহাকে ব্রাত্য করিয়া রাখেন নাই। দৃষ্টান্তটি উল্লেখ্য এই কারণেই যে, কিছু ব্যতিক্রম বাদ রাখিলে অধিকাংশ নূতন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই পরিকাঠামো নামক বস্তুটির বিষম অভাব। শুধুমাত্র মনোহারী ভবন বানাইলেই যে চলে না, উপযুক্ত শিক্ষক, পরীক্ষাগার হইতে শুরু করিয়া ‘ক্যাম্পাসিং’ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই যে ধরনের পেশাদারিত্ব প্রয়োজন, তাহার অভাব নূতন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির অধিকাংশের সর্বাঙ্গে। প্রতিশ্রুতি দিয়া প্রথম কয়েক বৎসর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। তাহার পরে প্রতিশ্রুতিগুলি শূন্যগর্ভ বলিয়া প্রতীয়মান হইলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ উবিয়া যাইতে বাধ্য। তাহাই ঘটিতেছে। সাবধান হওয়া জরুরি। অবিলম্বে। |