সকালে কুয়াশা নেই। দিনে নেই মেঘ। দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে উত্তুরে হাওয়ার দাপাদাপি। এবং সোমবার তাপমাত্রা নেমে গেল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে। চলতি মরসুমে এই প্রথম।
এই সব কিছুই শীতের পক্ষে অনুকূল বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আলিপুর আবহাওয়া দফতর তেমনটা ভাবছে না। দক্ষিণবঙ্গে এখনই শীত আশার সম্ভাবনা দেখছে না তারা।
লক্ষণ মিলে যাচ্ছে। তবু শীতের আগমন নিয়ে কেন আশার কথা শোনাতে পারছে না হাওয়া অফিস?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, লক্ষণ মিলছে বলে মনে হলেও বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি শীতের অনুকূল নয়। কারণ, দক্ষিণ ভারতে এই মুহূর্তে সক্রিয় রয়েছে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু। তার ফলে বঙ্গোপসাগরে ঘনঘন নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণাবর্ত তৈরির পরিস্থিতি রয়ে গিয়েছে। নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত হঠাৎ করে পরিমণ্ডলে মেঘ ঢুকিয়ে দিতে পারে। আর মেঘ ঢুকলেই তা উত্তুরে হাওয়ার মুখে দেওয়াল তুলে দেবে। এই ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপের আশঙ্কা না-কাটা পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে শীত মুখ ঘুরিয়েই থাকবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
অথচ এ বার অনেক আগেভাগেই আগমনের ইঙ্গিত দিয়ে আশা জাগিয়েছিল শীত। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে বৃষ্টি বিদায় নেওয়ায় দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা নামতে শুরু করে। গত বছরের মতো এ বারেও শীত লম্বা ইনিংস খেলবে বলে আশায় ছিলেন আবহবিদেরা। কিন্তু নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বারে বারে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে এবং সেই সব ঘূর্ণাবর্তই উত্তুরে হাওয়াকে তেমন জমাট বাঁধতে দেয়নি। ফলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কোনও সময়েই ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামতে পারছিল না। গত কয়েক দিন ধরে অবশ্য আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় উত্তুরে হাওয়া ঢুকে পড়েছে পরিমণ্ডলে। তাই তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে এ সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার নীচে।
সোমবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মরসুমে এই প্রথম। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “আগামী কয়েক দিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এমনটাই থাকবে। গোটা দক্ষিণবঙ্গেই শীত-শীত ভাবটা থাকবে। কিন্তু এটা সাময়িক।”
বারবার আশা দিয়েও শীত এ রাজ্যে দানা বাঁধতে পারছে না কেন?
গোকুলবাবুর ব্যাখ্যা, বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ স্থিতিশীল না-হওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ তৈরির আশঙ্কা থাকবেই। কারণ, এই সময়ে দক্ষিণ ভারতে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকে। সোমবার বিকেলের উপগ্রহ-চিত্র বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফলে বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ কয়েক দিনের মধ্যে ফের অস্থির হয়ে উঠতে পারে। এবং সেটা শীতের আগমনের প্রতিকূল বলেই জানাচ্ছেন হাওয়া অফিসের অধিকর্তা।
উত্তর ভারত জুড়ে তাপমাত্রা কিন্তু নামতে শুরু করেছে। সোমবার পঞ্জাবের আদমপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন দেশের সমতলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল এটাই। দিল্লির মৌসম ভবন থেকে জানানো হয়েছে, উত্তর ভারতের তাপমাত্রা আরও কমবে। তবে রাজস্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। বাড়বে গোটা পশ্চিম ভারতের তাপমাত্রাও।
আরব সাগরে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপের জন্য পশ্চিম ভারতের উপরে মেঘ জমে রয়েছে। সেই মেঘ ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে। আরব সাগরের নিম্নচাপটি সরে গেলে বঙ্গোপসাগরে ফের একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছে মৌসম ভবন। |