পাঁচ দিন ধরে সংসদে অচলাবস্থা চলছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু তার মধ্যেই লোকপাল বিল নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির খসড়া রিপোর্টের কপি পাঠানো শুরু হল কমিটি-সদস্যদের কাছে। খসড়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ও আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখার কথা বলায় ফের অণ্ণা শিবিরের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা জোরদার হয়ে উঠেছে। কারণ, অণ্ণা হজারে ও তাঁর সহযোগীরা গোড়া থেকেই এই দু’টিকে লোকপালের আওতায় রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন।
সরকারি সূত্রের খবর, খসড়া রিপোর্টটি নিয়ে বুধবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর কেন্দ্রের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, স্থায়ী কমিটিতে ওই রিপোর্ট অনুমোদিত হলেই সেটি সংসদে পেশ করা হবে। এর পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাও নয়া লোকপাল বিলে সায় দেবে দ্রুত। যাতে সংসদের চলতি অধিবেশনেই নয়া বিল পেশ করা যায়। কেন্দ্রের ওই শীর্ষ নেতার কথায়, সরকার ও কংগ্রেসের তরফে বারবারই এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে লোকপাল বিল পাশ করাতে কেন্দ্র সচেষ্ট হবে। কিন্তু সংসদে টানা অচলাবস্থা চলছে। বিরোধী পক্ষের এক অংশ এ কথাও বলছে যে, কংগ্রেস লোকপাল বিল পাশ করাতে চায় না বলেই অচলাবস্থা জিইয়ে রাখছে। কংগ্রেসের তরফে তাই এটা তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে যে, লোকপাল বিল নিয়ে সরকারের তৎপরতায় কোনও খামতি নেই।
স্থায়ী কমিটির খসড়ায় বিচার ব্যবস্থাকেও লোকপালে রাখা হয়নি। কারণ, সরকার ইতিমধ্যেই বিচার ব্যবস্থার দায়বদ্ধতা বিল পেশ করেছে সংসদে। প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালে চাননি কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। এই ক্ষেত্রে কমিটিতে ‘প্রায় সর্বসম্মতি’ হয়েছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। আর আমলাতন্ত্রের নিচু তলাকে লোকপালে না রাখার পিছনে যুক্তি, এই স্তরে অফিসারের সংখ্যা এত বেশি যে তাঁদের উপর ঠিকঠাক নজর রাখা সম্ভব হবে না লোকপালের পক্ষে। এর জন্য সরকারের আলাদা ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করে স্থায়ী কমিটি।
সর্বোপরি রাহুল গাঁধীর পরামর্শ অনুযায়ী লোকপালকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার সুপারিশও করতে চলেছে স্থায়ী কমিটি। কমিটি সূত্রে বলা হচ্ছে, এ জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। সেই সংশোধনের মাধ্যমে এক আইনেই কেন্দ্র ও রাজ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যকে আলাদা করে আইন করতে হবে না।
তবে এর পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। সংসদে যে ভাবে অচলাবস্থা চলছে, তাতে স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট সংসদে পেশ করা যদিও বা সম্ভব হয়, নতুন করে বিল পেশ করার সুযোগ পাবে কি সরকার?
|