‘গ্রেফতার’ ফ্রন্ট চেয়ারম্যান
আগেই বাসে বসে কেন, উষ্মা প্রকাশ বিমানের
বিমান বসুর বাস-বিড়ম্বনা আর কাটছে না!
কুড়ি দিন আগে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে শ্রমিক সংগঠনের আইন অমান্যে বাসের সামনের দরজা দিয়ে উঠে পিছনের দরজা দিয়ে নিমেষে নেমে গিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ ঘটিয়েছিলেন তিনি। আর সোমবার বামফ্রন্টের আইন অমান্যে সেই একই জায়গায় ফ্রন্ট চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন, যাঁরা আগেই বাসে উঠে বসে আছেন, তাঁর নির্দেশমাত্র নেমে না-এলে তাঁরা বামফ্রন্টের নন বলে ধরা হবে! এমনকী, তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থারও ‘হুঁশিয়ারি’ দিতে শোনা গেল বিমানবাবুকে!
সাতের দশকের পরে এ বারই যে তাঁরা সকলে কেন্দ্রীয় ভাবে আইন অমান্য করছেন, সে কথা জানিয়েই রাস্তায় মিছিল-সভা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানকে এক হাত নেন বিমানবাবু। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, রাস্তায় মিটিং-মিছিল হবে না! রাস্তা ছাড়া প্রতিবাদ করতে কোথায় যাব? আকাশে? জলে? জলে নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু আকাশে তো করতে পারব না! রাস্তাকেই বামপন্থীদের রাস্তা হিসাবে বেছে নিতে হবে!”
কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বামফ্রন্টের কেন্দ্রীয় আইন অমান্যের কর্মসূচি ছিল এ দিন। আইন অমান্য শুরু হওয়ার আগে সমাবেশে বক্তৃতা করবেন সিপিএম এবং বাম শরিক নেতৃত্ব এমনই ছিল পরিকল্পনা। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবুই বক্তা হিসাবে সেই কর্মসূচি শুরু করেন।
রাণি রাসমণি রোডে ফ্রন্টের আইনঅমান্য আন্দোলনে বিমান বসু। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে আইন অমান্য করতে যাওয়ার আগে হঠাৎই বিমানবাবুর চোখে পড়ে, গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের আনা বাসে আগে থেকেই উঠে বসে আছেন কিছু লোক! মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা শুরু করেন, “আগেই যাঁরা বাসে উঠে বসে আছেন, তাঁরা নেমে আসুন। ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসুন! যদি বামফ্রন্টের লোক হন, বাস থেকে নেমে আসুন। যদি না নামেন, তা হলে বুঝব তাঁরা বামফ্রন্টের নন! পুলিশকে তখন অন্য ব্যবস্থা নিতে বলতে হতে পারে!” বিমানবাবুর এ হেন ঘোষণায় সমাবেশ স্থলে সিপিএমের রাজ্য নেতা-নেত্রীদের মধ্যেও হাসির রোল ওঠে!
এ বারে অবশ্য বিমানবাবুর বাসে উঠেই অবতরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। গ্রেফতার হয়েই বাসে চেপে প্রেসিডেন্সি জেলের দিকে রওনা হন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান। পাশের আসনে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রাক্তন মন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লারাও পুলিশের বাসে উঠেই গ্রেফতার ‘বরণ’ করেন। আইন অমান্যের দাবি সংবলিত জ্যাকেট পরেছিলেন বামফ্রন্ট এবং সিপিএমের সব রাজ্য নেতা-নেত্রীই। বিমানবাবু অবশ্য জ্যাকেটে ছিলেন না। তবে তাঁর পিছনে সংবাদমাধ্যমের ‘তাড়া’য় গত বারের মতো কোনও ‘বিপত্তি’ যাতে না-ঘটে, তার জন্য বাসে ওঠা পর্যন্ত বিমানবাবুকে ঘিরে রেখেছিল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী!
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, রাজ্যে ‘সন্ত্রাস’ এ সবের প্রতিবাদেই এ দিনের আইন অমান্য কর্মসূচি ছিল। জমায়েত ছিল ভালই, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে যার শেষ গিয়ে পৌঁছেছিল প্রায় ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত।
বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেন, “সব কিছুর দাম বাড়ছে আর রাজ্যের মন্ত্রীদের দাম কমছে! যা বলার, সব মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হয়! তাঁকে বলছি, নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরা এখান থেকে মহাকরণ দখল করতে যাব না বা সংবিধান হাতে বিধানসভা ভাঙচুর করতে যাব না!” ধান, পাট, সারের দাম-সহ নানা সমস্যার কথা জানাতে ফের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছে বামফ্রন্টের পরিষদীয় দল। সূর্যবাবুর কথায়, “কৃষকেরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েতের ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছেন। এটা শুধু আইন নয়, সংবিধান ভঙ্গ। যত দিন মুখ্যমন্ত্রী আইন ভাঙবেন, আমাদের প্রতিবাদ চলবে। এই আইন অমান্যই শেষ নয়!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.