তৃণমূল প্রার্থীর প্রচার-মিছিল শেষ হল রাজ্যের প্রয়াত এক মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে। সিপিএম প্রার্থী ‘আশীর্বাদ’ নিতে গেলেন দলেরই দুই প্রবীণ নেতার বাড়ি। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচার শেষ হল ‘প্রতীকী তাৎপর্যে’!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেড়ে-যাওয়া দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সীর মিছিল সোমবার শেষ হয়েছে বেলতলা রোডে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের বাড়ির সামনে। সিদ্ধার্থবাবুকে ‘শ্রদ্ধা’ করতেন তৃণমূল নেত্রী, প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও মমতাকে ‘স্নেহ’ করতেন। সেই অর্থে মমতার ‘নিজের লোক’ সুব্রতবাবুর মিছিল বেলতলায় শেষ হওয়া ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বৈকি! তবে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, ওই জায়গায় মিছিল শেষ করার মধ্যে ‘প্রতীকী’ কিছু নেই। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আমাদের প্রার্থী সুব্রতবাবুকে সিদ্ধার্থবাবু স্নেহ করতেন ঠিকই। কিন্তু জায়গাটা আমাদের প্রধান নির্বাচনী দফতরের কাছাকাছি বলেই মিছিল এখানে শেষ করা হয়েছে।”
সুব্রতবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী, সিপিএম প্রার্থী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন প্রচারের শেষ লগ্নে গিয়েছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্রের বাড়ি। |
সোমনাথবাবু প্রার্থীকে বলেছেন, টিভি-র দৌলতে তিনি ঋতব্রতকে চেনেন। তরুণ, বলিয়ে-কইয়ে নেতাদের তুলে আনাই দরকার সিপিএমের। ঋতব্রতের কথায়, “সোমনাথদা ভোট দেওয়ার (বুধবার ভোট, ৪ ডিসেম্বর ফলপ্রকাশ) জন্যই কলকাতায় এসেছেন। অশোকবাবু বলেছেন, এই শরীরেও সকাল সকাল ভোট দিতে যাবেন। দু’টোই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।” সোমনাথবাবু রাতে রাজভবনে রাষ্ট্রপতির সম্মানে নৈশভোজে যোগ দিতে যাওয়ার আগে বলেন, “ঋতব্রত এসেছিল, কথা হল। লড়াই তো ভোটের বাক্সে হবে! এখানে আমার ভূমিকা এক জন ভোটারের। এর বেশি কী-ই বা বলব?”
সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত সোমনাথবাবুর ‘আর্শীবাদ’ চাইতে আলিমুদ্দিনের ‘অনুমোদন’ নিয়েই গিয়েছিলেন ঋতব্রত। সোমনাথবাবুর বহিষ্কার যাঁর হাত দিয়ে হয়েছিল, সিপিএমের সেই সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট উপনির্বাচনের প্রচারে আসেননি। তাঁর ঘরণী, পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটকে প্রচারে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রাজ্য দলের আমন্ত্রণে পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি অবশ্য দক্ষিণ কলকাতায় এসে প্রচার করে গিয়েছেন। কারাট-আলিমুদ্দিন ‘সমীকরণে’র নিরিখেই ঋতব্রতের সোমনাথবাবুর বাড়ি যাওয়া ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা।
শেষ দিনে ভবানীপুরের প্রিয়নাথ মল্লিক লেনে তৃণমূলের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রচার শুরু করেন মন্ত্রী সুব্রতবাবু। বিভিন্ন এলাকায় মিছিলে ছিলেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী, তৃণমূলের দুই অভিনেতা-অভিনেত্রী সাংসদ তাপস পাল ও শতাব্দী রায়, রাজ্যের দুই মন্ত্রী জাভেদ খান ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কলকাতায় উপনির্বাচনের ঠিক আগে বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের অন্তর্গত এ পি রায় রেলওয়ে ইনস্টিটিউটের পদাধিকারী নির্বাচনের ৬টি আসনেই বিপুল ভোটে জিতেছেন তৃণমূল-সমর্থিত প্রার্থীরা। ২৫ বছর ধরে ওই সংস্থার ক্ষমতায় ছিল সিপিএম।
শেষ লগ্নের প্রচারে তৃণমূল নেতারা ভোটারদের কাছে একটাই আবেদন জানিয়েছেন মমতার ‘নিজের’ আসনকে ‘সুরক্ষিত’ রাখতে সুব্রতবাবুকে জয়ী করতে হবে। প্রচার শেষে সুব্রতবাবুর ‘ব্যক্তিগত’ অভিমত, “অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব আছে বলে মনে হল না!” পক্ষান্তরে, ঋতব্রতের প্রতিক্রিয়া, “১১ বছর আগে মানে না-বুঝেই একটা স্লোগান শুনেছিলাম, ঐক্যবদ্ধ মানুষের পরাজয় নেই। এই লড়াইটা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার লড়াই।” দক্ষিণ কলকাতা লোকসভায় গত বার মমতা জিতেছিলেন প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার ভোটে। বিধানসভা ভোটে ওই লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের হিসাব ধরলে তৃণমূলের ব্যবধান সাড়ে তিন লক্ষের বেশি। সিপিএমের কাছে প্রথম ‘চ্যালেঞ্জ’, দ্বিতীয় ব্যবধানটি কমানো। |