ইসিএল কয়লা দিচ্ছে না। আর তার জেরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশনের (ডিপিএসসি) চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। গত সোমবার থেকেই ওই কেন্দ্রটিতে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে সংস্থা কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই চাকরি হারানোর আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সংস্থার প্রায় দেড়শো শ্রমিক-কর্মী। আসানসোল অঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিষেবাও ব্যহত হচ্ছে।
সোমবার সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমেশ দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত শুক্রবার বৈঠক করেছি। কোল ইন্ডিয়া ৩ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি চেয়েছে। আমরা দ্রুত সেই টাকা পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে কোল ইন্ডিয়াকে ওই দাবি লিখিত ভাবে দিতে হবে।”
ডিপিএসসি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় সরবরাহ কর হয়। এ ছাড়া মহকুমার গৃহস্থালীর বিদ্যুৎও সরবরাহ করে ডিপিএসসি। রাজ্যের আইন ও বিচার মন্ত্রী তথা আসানসোলের বিধায়ক মলয় ঘটক জানান, ঠিক কী কারণে উৎপাদন বন্ধ তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, বিষয়টি তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
ডিপিএসসি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে ওঠে ১৯৯১ সালে। তিনটি ইউনিট থেকে মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। ওই সময় ইসিএলের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষরিত হয়, প্রয়োজনীয় কয়লা দেবে ইসিএল। পরিবর্তে ইসিলের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে ডিপিএসসি। চুক্তি মতো বাজার থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ডিপিএসসি-কে কয়লা দেওয়ার কথা ইসিএলের। ২০ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। এর পর থেকেই কয়লা সঙ্কটে ধুঁকতে থাকে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। সংস্থার এক কর্তার দাবি, ইসিএল আর বাজার দর অপেক্ষা কম মূল্যে কয়লা দিতে রাজি নয় বলেই সমস্যা জটিল হয়েছে।
ইসিএলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল ও অপারেশন) তথা কয়লা সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পদস্থ আধিকারিক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “আমরা ডিপিএসসি-র কাছে গত এক মাস ধরে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি চাইছি। কিন্তু ওরা তা দিচ্ছে না। ওদের কাছে ১১ কোটি টাকার বেশি পাওনা হয়েছে। বকেয়া না মেটালে কয়লা সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তাই কয়লা দেওয়া বন্ধ করেছি।”
আইএনটিটিইউসি-র কারখানা কমিটির সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের প্রাথমিক ধারণা কর্তৃপক্ষ চক্রান্ত করে কেন্দ্রটি বন্ধ করতে চাইছে। আমরা জোরদার আন্দোলন শুরু করব।” কারখানার সিটু ইউনিয়নের সম্পাদক গৌর দত্ত জানান, উৎপাদন শুরু করার জন্য তাঁরাও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একই সুরে এআইটিইউসি-র সম্পাদক অসীম চক্রবর্তীও শ্রমিক স্বার্থে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু করার দাবি জানিয়েছেন। সংস্থার চারটি শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি উৎপাদন বন্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। কমিটির আহ্বায়ক মলয় বসুরায় বলেন, “আমি ডিপিএসসি এবং ইসিএল, দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি। সম্মানজনক শর্তে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। সমস্যা না মিটলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।” |